নতুন জন্ম নিবন্ধনে আর লাগবে না পিতা-মাতার জন্ম নিবন্ধন
সুখবর! এখন থেকে শিশুর জন্ম নিবন্ধন করতে লাগবে না পিতা মাতার জন্ম নিবন্ধন নম্বর। এখন সবার জন্যই জন্মসনদ পাওয়া সহজ হল।
এতদিন ২০০১ এরপর জন্মগ্রহণকারী সকলের জন্ম নিবন্ধন করতে প্রয়োজন হতো পিতা-মাতার ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন। মা-বাবার বাংলা ও ইংরেজি তথ্য সহ জন্ম নিবন্ধন না থাকলে সন্তানের জন্ম নিবন্ধন আবেদন করা যেত না। নিয়মটি এখন বাতিল করা হয়েছে যা অবশ্যই একটি খুশির সংবাদ। আসুন এ নিয়ে বিস্তারিত জানি।
শিশুর জন্ম নিবন্ধন আবেদনে পিতা-মাতার বাংলা ও ইংরেজি তথ্যসহ ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন নম্বর দেওয়া হলেই পিতা-মাতার বাংলা ও ইংরেজি নাম আবেদনে যুক্ত হতো। তবে এখন থেকে লাগবে না পিতা-মাতার জন্ম নিবন্ধন নম্বর, আবেদনে সরাসরি পিতা-মাতার নাম লিখেই আবেদন জমা দেয়া যাবে।
এছাড়া শুধুমাত্র হাসপাতাল থেকে শিশু জন্মের পর দেয়া ছাড়পত্র/জন্ম সনদ বা টিকার কার্ড যেকোন একটি ডকুমেন্ট দিয়েই জন্ম নিবন্ধন করা যাবে।
জন্ম নিবন্ধনে পিতা-মাতার ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন বাধ্যতামূলক নয়
গত ২৭ জুলাই থেকে নতুন জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করতে গেলে অনলাইনে মা বাবার জন্মসনদ নম্বর বাধ্যতামূলকভাবে চাওয়া হচ্ছে না।
তবে কেউ ইচ্ছা করলে আবেদনে পিতা-মাতার জন্ম নিবন্ধন নম্বর প্রদান করতে পারবে। এতে স্বয়ংক্রীয়ভাবে পিতা ও মাতার নাম তাদের জন্ম নিবন্ধন থেকে সংগ্রহ করা হবে।
যাদের পিতা-মাতার জন্ম নিবন্ধনে সমস্যা আছে, বিয়ে বিচ্ছেদ হওয়া পরিবারের সন্তান, যাদের মা কিংবা বাবা যেকোনো একজনের সঙ্গে যোগাযোগ নেই ও পথশিশুদের জন্ম নিবন্ধন করার জন্য, পিতা-মাতার নাম সরাসরি টাইপ করে এন্ট্রি করা যাবে। যেটি আগে করা যেত না।
এর ফলে জন্ম নিবন্ধন প্রক্রিয়াটি অনেক সহজ হল এবং মানুষ ভোগান্তির শিকার হওয়া থেকে মুক্তি পাবে।
রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় বলছে, এখন থেকে হাসপাতালে জন্ম নেওয়ার পর দেওয়া ছাড়পত্র বা টিকার কাগজ যেকোনো একটি প্রমাণ দেখিয়ে শিশুর জন্মনিবন্ধন করা যাবে।
এ নিয়ম আগেও কার্যকর ছিল। তবে ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে নিয়মে পরিবর্তন এনে বলা হয়েছিল, ২০০১ সালের পর জন্ম নেওয়া ব্যক্তিদের জন্মনিবন্ধন করতে হলে তার বাবা-মায়ের জন্মনিবন্ধন সনদ অবশ্যই প্রয়োজন হতো। ওই সময় জন্মনিবন্ধন করতে গিয়ে নানা ভোগান্তি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অভিভাবকেরা।
তৃতীয় লিঙ্গ, পিতৃ-মাতৃ পরিচয়হীন, ভবঘুরে ও পথশিশুদের জন্ম নিবন্ধন
জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন বিধিমালা ২০১৮–এর ৩ (গ) ধারা অনুসারে, কোনো ব্যক্তি এতিম, প্রতিবন্ধী, তৃতীয় লিঙ্গ, পিতৃ-মাতৃ পরিচয়হীন, পরিচয়হীন, বেদে, ভবঘুরে, পথবাসী বা ঠিকানাহীন বা যৌনকর্মী হলে যেসব তথ্য অসম্পূর্ণ থাকবে, সেসব স্থানে ‘অপ্রাপ্য’ লিখে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন করা যাবে। এসব ক্ষেত্রে তথ্যের ঘাটতির কারণ দেখিয়ে নিবন্ধক জন্ম বা মৃত্যুনিবন্ধন প্রত্যাখ্যান করতে পারবেন না।
এসব ব্যক্তির জন্ম নিবন্ধনের জন্য অনলাইনে আবেদন করা যাবে না বরং সরাসরি ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে আবেদন করতে হবে।
জন্ম নিবন্ধনে মা-বাবার জন্ম নিবন্ধন বাধ্যতামূলক হলে যেসব অসুবিধা রয়েছে
নতুন জন্ম নিবন্ধনে মা-বাবার ডিজিটাল ও ইংরেজি তথ্য সহ জন্ম নিবন্ধন প্রয়োজন হওয়ায়, অনেক মানুষ ডিজিটাল জন্মসনদ নিয়ে নানা অসুবিধায় পড়েন।
কারো ইংরেজি জন্ম নিবন্ধন করার জন্য, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেই। কারো বাবা মায়ের নামের বানানে সমস্যা সহ বিভিন্ন জটিলতায় পড়েন।
তাছাড়া, বিচ্ছেদ হওয়া মা-বাবার সন্তান ও পথশিশুদের ক্ষেত্রে আবেদনসমূহ এতোদিন বিশেষ বিবেচনায় করা হতো। এক্ষেত্রে অনলাইন থেকে আবেদন করে সহজে জন্ম নিবন্ধনের কোন উপায় ছিলনা। এখন থেকে যেহেতু পিতা-মাতার জন্ম নিবন্ধনের বাধ্যবাধকতা নেই, তাই সকলের জন্যই অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদন করে সহজেই জন্ম সনদ পাওয়ার সুযোগ সৃষ্ঠি হয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ১২ জুন পথশিশুদের জন্মনিবন্ধন সনদ দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে স্পোর্টস ফর হোপ অ্যান্ড ইন্ডিপেনডেন্স বাংলাদেশ নামের একটি বেসরকারি সংগঠনের পক্ষে আইনজীবী তাপস কান্তি বল হাইকোর্টে রিট করেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০ জুন হাইকোর্ট একটি রুলে দেশের ১৬ লাখ পথশিশুকে জন্মনিবন্ধন সনদ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং পথশিশুদের জন্ম নিবন্ধন সনদ দেওয়ার ক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চান।
সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের জন্ম নিবন্ধনের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।
তিন মাসের মধ্যে নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, জন্ম নিবন্ধন অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেন আদালত।
আইনজীবী তাপস কান্তি বল আরও বলেন, মা-বাবার জন্ম সনদ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা উঠে গেলে এই শিশুরা উপকৃত হবে।
শেষকথা
শিশুর নতুন জন্ম নিবন্ধন করার প্রক্রিয়া সহজ করা অবশ্যই একটি সাধুবাদ জানানের মত একটি পদক্ষেপ। এর ফলে লাখ মানুষের হয়রানি-পেরেশানি কমে যাবে। পাশাপাশি, পিতা-মাতার পরিচয়হীন শিশু, বাবা-মার জন্ম নিবন্ধনে ভুল-ভ্রান্তি ও সমস্যা থাকার কারণে কোন শিশুর জন্ম নিবন্ধন করতে আর কোন অসুবিধা রইল না।
জন্ম নিবন্ধন সম্পর্কে আরও তথ্য
নতুন জন্ম নিবন্ধন | জন্ম নিবন্ধন আবেদন |
সংশোধন | জন্ম নিবন্ধন সংশোধন |
যাচাই | জন্ম নিবন্ধন যাচাই |
ইংরেজি করুন | জন্ম নিবন্ধন ইংরেজি করার নিয়ম |
হারিয়ে গেলে | জন্ম নিবন্ধন হারিয়ে গেলে করণীয় |
অনলাইনে না থাকলে | জন্ম নিবন্ধন অনলাইনে না থাকলে কি করতে হবে |
১৬ ডিজিটের জন্ম নিবন্ধন | ১৬ ডিজিটের জন্ম নিবন্ধন যাচাই |
জন্ম নিবন্ধন সংক্রান্ত সকল তথ্য | জন্ম নিবন্ধন |
হোমপেইজে যান | Home |
আপনি ভুল তথ্য কেনো দিচ্ছেন?
সঠিক তথ্যই দিচ্ছি। প্রমাণও দিলাম এরপরও কিভাবে বুঝলেন ভুল?