মাতৃত্বকালীন ভাতা কিভাবে পাওয়া যায় ২০২৩

নির্দিষ্ট ফরম বা অনলাইনে আবেদন করে মাতৃত্বকালীন ভাতা পেতে পারেন। জানুন মাতৃত্বকালীন ভাতা কিভাবে পাওয়া যায়, অনলাইন আবেদন ও ভাতা কত টাকা বিস্তারিত।

আপনি মাতৃত্বকালীন ভাতার জন্য আবেদন করতে চান? তাহলে জেনে নিন মাতৃত্বকালীন ভাতা কিভাবে পাওয়া যায়, মাতৃত্বকালীন ভাতা অনলাইন আবেদন করার নিয়ম, ভাতা কত টাকা পাওয়া যায় ও শর্তাবলী কি কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।

দরিদ্র ও অসহায় মানুষের জন্য গর্ভাবস্থা ও শিশু লালনপালন একটি কঠিন পরীক্ষা। এ সময়ে সঠিক চিকিৎসার অভাব ও অপুষ্টির কারনে বহু শিশু ও মা মৃত্যুবরন করেন। তাই সরকারি ভাতার তালিকায় ২০১১ সাল থেকে মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান করা হয়। চলুন জেনে নেই মাতৃত্বকালীন ভাতা কিভাবে পাওয়া যায়।

মাতৃত্বকালীন ভাতা কিভাবে পাওয়া যায়

মাতৃত্বকালীন ভাতা পাওয়ার জন্য গর্ভাবস্থার মেডিকেল রিপোর্ট, পাসপোর্ট সাইজের ছবি ও ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে নির্দিষ্ট ফরমে বা অনলাইনে আবেদন করতে হবে। আবেদনটি ইউনিয়ন পরিষদ, বা পৌরসভা, বা কাউন্সিলর অফিসে জমা দিতে হবে। উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আবেদন অনুমোদন করলে আপনি মাতৃত্বকালীন ভাতা পাবেন।

মাতৃত্বকালীন ভাতা মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের একটি সেবা প্রকল্প। তবে সকল গর্ভধারণকারী মা এই ভাতা পাবেনা। তার জন্য প্রযোজ্য কিছু শর্তাবলী পূরন হলেই মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান করা হবে।

এখন অনলাইনে ঘরে বসেই মাতৃত্বকালীন ভাতার আবেদন করা যায়। পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আবেদন টি যাচাই করে তার অনুমোদন দেন।

আরও পড়ুন- বয়স্ক ভাতা আবেদন করার নিয়ম

মাতৃত্বকালীন ভাতা অনলাইন আবেদন

মাতৃত্বকালীন ভাতার অনলাইন আবেদন করতে ভিজিট করতে হবে – মাতৃত্বকালীন ভাতার আবেদন এই লিংকে। এখানে ব্যক্তিগত তথ্য, ঠিকানা, আর্থ-সামাজিক অবস্থার তথ্য, ছবি ও স্বাক্ষর আপলোড করে অনলাইনে আবেদন করতে হবে।

মাতৃত্বকালীন ভাতার অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়াটি নিচে ধাপে ধাপে দেখানো হলো।

ধাপ ১: আবেদনকারীর ব্যক্তিগত তথ্য দিন

প্রথমে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে মাতৃত্বকালীন ভাতার অনলাইন আবেদনের লিংক- http://103.48.16.6:8080/LM-MIS/applicant/onlineRegistration ভিজিট করুন। আপনার সামনে একটি আবেদন ফরম ওপেন হবে।

আপনি কোন অর্থবছরে আবেদন করছেন তা নির্বাচন করে নিন। তারপর আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর দিন। এবার মাতৃত্বকালীন মায়ের নাম বাংলা ও ইংরেজিতে লিখে পিতার নাম, মাতার নাম ও স্বামীর নাম লিখতে হবে।

মাতৃত্বকালীন ভাতা অনলাইন আবেদন ফরম

তারপর নিচের ছবির মতো ব্যাচ নং এ চলমান অর্থবছর সিলেক্ট করে দিন। এবার আপনার ডাকনাম, জন্মস্থান, ধর্মীয় তথ্য, শিক্ষাগত যোগ্যতা, রক্তের গ্রুপ ও বৈবাহিক অবস্থা পূরন করুন।

প্রবাসী বাংলাদেশী হলে, এন আর বি? এই অপশনে টিক দিন। আপনি যদি অন্য কোন সরকারি ভাতা পেয়ে থাকেন তাহলে অন্য কর্মসূচির ভাতাভোগী কি? এই বক্সে টিক দিন।

ধাপ ২: বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা

আপনার বর্তমান ঠিকানার তথ্য ধাপে ধাপে ফিলাপ করুন। নিচে স্থায়ী ঠিকানা যদি বর্তমান ঠিকানার মতো একই হয় তাহলে খালিঘর টিতে ক্লিক করুন, অন্যথায় ঠিকানা পূরন করুন।

মাতৃত্বকালীন ভাতা অনলাইন আবেদন

ধাপ ৩: আর্থ-সামাজিক তথ্য

এখানে আপনার পরিবারের আয়ের উৎস সিলেক্ট করতে হবে। তারপর মাসিক আয়ের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১৫০০-২০০০ টাকা বা তার কম দিতে হবে। গর্ভধারণকারী প্রতিবন্ধী কিনা এবং বাসস্থান আছে কিনা তা সিলেক্ট করুন।

মাতৃত্বকালীন ভাতা কিভাবে পাওয়া যায়

কৃষি জমি-পুকুর আছে? এই প্রশ্নের উত্তরে অবশ্যই না হতে হবে। এখানে আপনার বয়স আইডি কার্ড অনুসারে দেওয়া থাকবে। তারপর গর্ভধারণ ক্রমে – কততম সন্তান সিলেক্ট করুন। এখানে ১ম বা ২য় সন্তান দিতে পারেন।

ধাপ ৪: পেমেন্টের তথ্য

আপনি কিভাবে ভাতা নিতে চান, ব্যাংক না মোবাইল ব্যাংকিং তা সিলেক্ট করে একাউন্টের নাম ও একাউন্ট নাম্বার দিন।

মাতৃত্বকালীন ভাতা কিভাবে পাওয়া যায়

ধাপ ৫: ছবি ও স্বাক্ষর সংযোজন

শেষ ধাপে আবেদন কারীর ছবি ও তার স্বাক্ষরের ছবি সংযোজন করতে হবে। আগে থেকেই নিজের ছবি ও একটি কাগজে স্বাক্ষর করে তার স্পষ্ট ছবি সংগ্রহ করে রাখতে হবে। তারপর Browse এ ক্লিক করে ছবি সিলেক্ট করতে হবে।

মাতৃত্বকালীন ভাতা অনলাইন আবেদন

ফাইল আপলোড হয়ে গেলে – ‘সংরক্ষন করুন’ এ ক্লিক করুন। আপনার আবেদন সম্পূর্ণ হয়েছে। পরবর্তীতে তথ্য যাচাই করে আপনার মোবাইলে জানিয়ে দেওয়া হবে।

মাতৃত্বকালীন ভাতা কিভাবে পাওয়া যায় তা আমরা জানলাম। চলুন জেনে নেই আরও কিছু তথ্য-

মাতৃত্বকালীন ভাতা কত টাকা?

মাতৃত্বকালীন ভাতা হিসেবে প্রতি ৬ মাস পর পর মাসিক ৮০০ টাকা করে একত্রে মোট ৪,৮০০ টাকা প্রদান করা হয়। এভাবে মোট ২৪ মাসে অনধিক ৪ বারে প্রায় ১৯,২০০ টাকা প্রদান করা হয়। মাতৃত্বকালীন ভাতা হিসেবে দুইজন সন্তানের ক্ষেত্রে ৩৬ মাসে মোট ২৮,৮০০ টাকা প্রদান করা হয়।

মাতৃত্বকালীন ভাতা অন্যান্য সাধারন ভাতা থেকে কিছুটা বেশি। বর্তমানে মাতৃত্বকালীন ভাতা বৃদ্ধি করার জন্য সুপারিশ করেছেন অনেকেই।

আরও পড়ুন- প্রতিবন্ধী ভাতা আবেদন

মাতৃত্বকালীন ভাতা বয়স সীমা

মাতৃত্বকালীন ভাতা পাওয়ার জন্য গর্ভধারনকারী মায়ের বয়স অবশ্যই ২০-৩৫ বছরের মধ্যে হতে হবে। এবং সন্তানের ক্রম ১ম ও ২য় হতে হবে। দুই বছরের পূর্বে কোন কারনে সন্তান মারা গেলে ৩য় গর্ভধারণ পর্যন্ত এ ভাতা পাওয়া যায়।

মাতৃত্বকালীন ভাতা নীতিমালা

মাতৃত্বকালীন ভাতা পাওয়ার জন্য নিম্নোক্ত শর্তাবলী প্রযোজ্য-

  • শুধুমাত্র দরিদ্র, প্রতিবন্ধী ও অসহায়দের জন্য এ ভাতা।
  • প্রথম ও দ্বিতীয় গর্ভধারন হতে হবে। 
  • বয়স ২০-৩৫ এর মধ্যে হতে হবে।
  • মাসিক আয় ১৫০০-২০০০ টাকা বা তার নিচে হতে হবে।
  • শুধুমাত্র বাসস্থান থাকলে বা ভাড়া বাসায় থাকলে আবেদন করতে পারবে। কোন কৃষিজমি বা পুকুর না থাকলে।
  • প্রতিবছর জুলাই মাসে ভাতা ভোগী নির্বাচন করা হয়। এ সময় অবশ্যই কমপক্ষে ৫ মাসের গর্ভবতী হতে হবে।

উপরোক্ত শর্তাবলি বিবেচনা করে ভাতা ভোগী নির্বাচিত হয়।

FAQ’s

মাতৃত্বকালীন ভাতা কিভাবে পাওয়া যায়?

আবেদনকারী নিজে ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে অথবা অনলাইনে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয়ে মাতৃত্বকালীন ভাতার জন্য আবেদন করলে, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা তা যাচাইপূর্বক অনুমোদন দিলে এ ভাতা পাওয়া যায়।

মাতৃত্বকালীন ভাতা ২০২৩ কত টাকা?

ভাতা ভোগী প্রতি ৬ মাস পর পর প্রতি মাসে ৮০০ টাকা হারে ৪,৮০০ টাকা পায়। এভাবে একজন সন্তানের ক্ষত্রে ২৪ মাস ও দুইজন সন্তানের ক্ষেত্রে ৩৬ মাস ভাতা পাবে।

মাতৃত্বকালীন ভাতার জন্য কিভাবে অনলাইনে আবেদন করা যায়?

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের ওয়েবসাইটে- http://103.48.16.6:8080/LM-MIS/applicant/onlineRegistration এই লিংকে প্রবেশ করে ফরম পূরন করে মাতৃত্বকালীন ভাতার জন্য আবেদন করা যায়।

মাতৃত্বকালীন ভাতা পাওয়ার নিয়ম কি?

মাতৃত্বকালীন ভাতা পাওয়ার জন্য আবেদনকারীকে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ফরমের মাধ্যমে গিয়ে অথবা অনলাইনে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয়ে মাতৃত্বকালীন ভাতার জন্য আবেদন করলে, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা তা যাচাইপূর্বক অনুমোদন দিলে এ ভাতা পাওয়া যায়।

মাতৃত্বকালীন ভাতা করতে কি কি লাগে?

মাতৃত্বকালীন ভাতা করতে আবেদনকারী মহিলার বয়স ২০ হতে হবে। ভাতার আবেদন করতে জাতীয় পরিচয়পত্র, গর্ভাবস্থার মেডিকেল রিপোর্ট, পাসপোর্ট সাইজের ছবি সহ ইউনিয়ন পরিষদ বা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ে ভাতার জন্য যোগাযোগ করে নিজের নাম তালিকাভুক্ত করতে হবে। এছাড়া অনলাইনেও মাতৃত্বকালীন ভাতার আবেদন করা যায়।

শেষকথা

মাতৃত্বকালীন ভাতা দারিদ্র মা ও সন্তানের জন্য। এই ভাতা নিয়ে অনেকেই প্রতারনার স্বীকার হয়। আমাদের সকলেরই উচিত তাদের অধিকার বুঝিয়ে দেওয়া। প্রতারক চক্রের থেকে বাচতে অবশ্যই মাতৃত্বকালীন ভাতা কিভাবে পাওয়া যায় তার সঠিক তথ্য জেনে নিবেন।

আজকের পোস্টের মূল বিষয় ছিলো – মাতৃত্বকালীন ভাতা কিভাবে পাওয়া যায়। আশাকরি পোস্টটি আপনাদের উপকারে আসবে। পোস্ট সম্পর্কিত আরও কোন তথ্য জানতে চাইলে কমেন্ট করে জানান। এরকম পোস্ট পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন, ধন্যবাদ।

Similar Posts

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।