বয়স্ক ভাতা অনলাইন আবেদন ফরম পূরণ করার নিয়ম ২০২৩
আপনার পরিবারের বয়স্ক ব্যক্তির জন্য বয়স্ক ভাতার আবেদন করতে চান? জানুন কিভাবে বয়স্ক ভাতার জন্য অনলাইনে আবেদন করবেন, কি কি লাগবে, আবেদন করার শর্তাবলী ও বিস্তারিত।
এখন খুব সহজেই মোবাইল বা কম্পিউটার থেকে অনলাইনে বয়স্ক ভাতার আবেদন করা যায়। আবেদন যাচাই বাছাইয়ের পর সরাসরি মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্টে ভাতা গ্রহণ করা যায়। তাই ঘরে বসেই এখন বয়স্ক ভাতা গ্রহণ করা যাবে।
বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে বয়স্ক ভাতার অর্থ G2P পদ্ধতিতে পরিশােধের জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ ও যাচাই-বাছাইয়ের পর সরাসরি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সরাসরি ভাতাভোগীর একাউন্টে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে।
বয়স্ক ভাতা কত বছর বয়সে দেওয়া হয়
বয়স্ক ভাতার জন্য আবেদন করতে পুরুষের বয়স ৬৫ বছরের উর্দ্ধে এবং মহিলার বয়স ৬২ বছরের উর্দ্ধে হতে হবে।
বয়স্ক ভাতা পাওয়ার যোগ্যতা ও শর্তাবলী
বয়স্ক ভাতা পাওয়ার জন্য নিম্নোক্তে শর্তগুলো পালন হতে হবে,
- বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে
- সংশ্লিষ্ট এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে এবং একটি জন্ম নিবন্ধন/জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর থাকতে হবে।
- আবেদনকারীর বয়স পুরুষের ক্ষেত্রে ৬৫ বছরের উর্দ্ধে এবং মহিলার ক্ষেত্রে ৬২ বছরের উর্দ্ধে হতে হবে। সরকার কর্তৃক দেয়া একটি নির্দিষ্ট তারিখে এই বয়স হতে হবে। বয়স নির্ধারণের সময় জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম নিবন্ধন এবং এসএসসি/সমমান পরীক্ষার সার্টিফিকেট অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো বিরোধ দেখা দিলে সংশ্লিষ্ট কমিটির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।
- প্রার্থীর গড় বার্ষিক আয় 10,000 (দশ হাজার) টাকার কম হতে হবে।
বয়স্ক ভাতা প্রাপ্তির অযোগ্যতা
- সরকারি কর্মচারী পেনশনভোগী হলে;
- দুঃস্থ মহিলা হিসেবে ভিজিডি কার্ডধারী হলে;
- অন্য কোনোভাবে নিয়মিত সরকারী অনুদান/ভাতা প্রাপ্ত হলে;
- কোনো বেসরকারি সংস্থা/সমাজকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান হতে নিয়মিতভাবে আর্থিক অনুদান/ভাতা প্রাপ্ত হলে।
আরও পড়ুন- প্রতিবন্ধী ভাতা অনলাইন আবেদন
অনলাইনে বয়স্ক ভাতার আবেদন করার নিয়ম
অনলাইনে বয়স্ক ভাতার আবেদন করার জন্য বয়স্ক ভাতা আবেদন ফরম পূরণ করে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বা পৌরসভার কাউন্সিলরের সাক্ষর নিন। এরপর উপজেলা সমাজসেবা অফিসে অথবা সমাজসেবা মাঠকর্মীর কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদনটি জমা দিন।
- সমাজসেবা অধিদপ্তরের বয়স্ক ভাতা আবেদন ওয়েবসাইটে গিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে আবেদন করুন।
- জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর ও জন্ম তারিখ দিয়ে বয়স্ক ভাতার আবেদন ফরম ডাউনলোড ও প্রিন্ট করে নিন।
- স্থানীয় চেয়ারম্যান, পৌরসভার কাউন্সিলরের স্বাক্ষর নিয়ে সমাজসেবা মাঠকর্মী বা উপজেলা সমাজসেবা অফিসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ জমা দিন।
বয়স্ক ভাতার জন্য অনলাইনে আবেদন আপনার মোবাইল বা কম্পিউটার উভয় থেকেই করতে পারবেন। আবেদন করার আগে পুরো নিয়মটি আগে পড়ে নিন। কি কি তথ্য প্রয়োজন হবে তা সংগ্রহ করে নিন তারপর আবার এই পোস্টটি দেখে আবেদন পূরণ করলে ভাল হবে।
আরও পড়ুন- মাতৃত্বকালীন ভাতা কিভাবে পাওয়া যায়
মাঝেমধ্যে কারিগরি কারণে বা সিস্টেম আপডেটের জন্য আবেদনের ওয়েবসাইটটি বন্ধ থাকতে পারে। “সিস্টেম উন্নয়নের কাজ চলছে। সাময়িক অসুবিধার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত” এই লেখাটি ওয়েবসাইটে দেখা যায়।
আবার বয়স্কভাতার আবেদনের একটি নির্দিষ্ট সময় থাকে। যখন আবেদন গ্রহণ করা হয় তখনি ওয়েবসাইটে আবেদন করা যাবে।
সমাজসেবা অধিদপ্তর বয়স্ক ভাতা আবেদন করার বিস্তারিত প্রক্রিয়াটি ধাপে ধাপে নিচে দেখানো হল।
ধাপ ১ঃ বয়স্ক ভাতার আবেদনের ওয়েবসাইটের লিংক http://mis.bhata.gov.bd/onlineApplication । লিংকে ক্লিক করে Google Chrome থেকে এই সাইটে যান। নিচের ছবির মতো একটি পেজ ওপেন হবে। এখান নির্বাচন করুন বক্সে ক্লিক করে বয়স্ক ভাতা অপশনটি সিলেক্ট করুন।
ধাপ ২ঃ এখানে প্রথম বক্সে যার নামে আবেদন করবেন তার এনআইডি কার্ডের নম্বর লিখুন ও দ্বিতীয় বক্সে তার জন্ম তারিখ সিলেক্ট করে করুন। এরপর ‘যাচাই করুন‘ বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ ৩ঃ এনআইডি কার্ড থেকে ছবিসহ আবেদনকারীর কিছু তথ্য স্বয়ংক্রীয়ভাবে পূরণ হয়ে যাবে। এখান থেকে যেই তথ্য অটোমেটিক পূরণ হবে না সেগুলো নিজে সঠিকভাবে পূরণ করে নিবেন।
ধাপ ৪ঃ এই ধাপে আবেদনকারী সম্পর্কে কিছু অতিরিক্ত তথ্য দিতে হবে। তথ্যগুলো হলো,
- বৈবাহিক অবস্থা
- শিক্ষাগত যোগ্যতা
- পরিবারের সদস্য সংখ্যা (পুরুষ, মহিলা ও হিজড়া)
- পেশা
- বার্ষিক আয়
- স্বাস্থ্যগত বা কর্মক্ষমতা সংক্রান্ত তথ্য
- সরকারি বা বেসরকারি আর্থিক সুবিধার তথ্য
- বাসস্থান তথ্য
- ভূমির পরিমাণ
ধাপ ৫ঃ এই ধাপে যোগাযোগের তথ্য দিতে হবে। আবেদনের ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, মোবাইল নম্বরটি কার সেটি সিলেক্ট করুন, ইমেইল (যদি থাকে) পূরণ করুন।
সব তথ্য পূরণ করা হলে একবার সব তথ্যগুলো চেক করে দেখুন কোন তথ্যে ভুল আছে কিনা। সব ঠিক থাকলে সংরক্ষণ বাটনে ক্লিক করে আবেদনটি জমা দিন।
মনে রাখবেন আবেদন জমা দেয়ার পর আর কোন তথ্য পরিবর্তন করার কোন সুযোগ নেই।
ধাপ ৬ঃ আবেদন সাবমিট করা হলে, প্রিন্ট করার অপশন পাবেন। এখানে প্রিন্ট বাটনে ক্লিক করে বয়স্কভাতার আবেদনটি PDF ফাইলে ডাউনলোড করে নিন।
নিজের প্রিন্টার না থাকলে এলাকার কোন কম্পিউটার সেবার দোকান থেকে ফরমটি প্রিন্ট করিয়ে নিন।
ধাপ ৭ঃ এরপর প্রিন্ট করা ফরমটির নির্দিষ্ট অংশে পৌরসভার কাউন্সিলরের স্বাক্ষর নিয়ে সমাজসেবা মাঠকর্মী বা উপজেলা সমাজসেবা অফিসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ জমা দিন।
বয়স্ক ভাতা আবেদন ফরম pdf ডাউনলোড
বয়স্ক ভাতা অনলাইন আবেদন সাবমিট করা হলে, প্রিন্ট অপশন পাবেন। প্রিন্ট বাটনে ক্লিক করে ক্লিক করে বয়স্কভাতার আবেদনটি PDF ফাইলে ডাউনলোড করে নিন।
বয়স্ক ভাতা আবেদন যাচাই
বয়স্ক ভাতা আবেদন যাচাই করার পর সঠিক ব্যাক্তিদের বাছাই করে ভাতার জন্য সিলেক্ট করা হবে। এজন্য স্থানীয় একটি কমিটি থাকে। কমিটির মাধ্যমে আবেদনসমূহ যাচাই-বাছাই করা হয়।
বয়স্ক ভাতার আবেদন যাচাইয়ে যেসব বিষয় বিবেচনা করা হয়,
- জাতীয়তাঃ প্রার্থীকে অবশ্যই বাংলাদেশের স্থায়ী নাগরিক হতে হবে।
- বয়স: সবচেয়ে বয়স্কদের অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।
- স্বাস্থ্যের অবস্থা: সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত শারীরিকভাবে অক্ষম, অর্থাৎ সম্পূর্ণরূপে অক্ষম।
- আর্থিক অবস্থা: দরিদ্র, উদ্বাস্তু এবং নিঃস্বদের অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।
- সামাজিক অবস্থা: বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত মহিলা, বিধবা, নিঃসন্তান এবং পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।
- জমির মালিকানা: ভূমিহীন ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। এই ক্ষেত্রে, বাসস্থান ছাড়া অন্য ব্যক্তির জমির পরিমাণ 0.5 একর বা তার কম হলে তিনি ভূমিহীন বলে বিবেচিত হবেন।
বয়স্ক ভাতা আবেদনের শেষ তারিখ
বয়স্ক ভাতা আবেদনের শেষ তারিখ সমাজ সেবা অধিদপ্তর কর্তৃক নোটিশের মাধ্যমে জানানো হয়। প্রতি বছরই নতুন বয়স্ক ভাতা আবেদন করার সুযোগ দেয়া হয়। যখন অনলাইনে আবেদন কার্যক্রম চলে তখনি আবেদন করতে হবে।
বয়স্ক ভাতা মোবাইল ব্যাংকিং
বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন অনুধান, ত্রাণ, ভাতা ইত্যাদি এখন মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে প্রদান করে আসছে করোনাকালীণ সময় থেকে।
এতে করে নাগরিকদের যেমন দুর্ভোগ কমছে একই সাথে এসব ভাতা বন্টনের ঝামেলা ও কমেছে। একইসাথে দালাল ও অসৎ ব্যক্তিদের দূর্নীতির পরিমাণও কমে আসছে।
অনলাইনে আবেদন করার পর কর্তৃপক্ষ আবেদন যাচাই বাছাই করার পর আবেদনটি গৃহীত হলে ভাতার টাকা গ্রহণ করার জন্য বয়স্ক ভাতা গ্রহণের জন্য মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট প্রয়োজন হবে।
বয়স্ক ভাতা মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট করার জন্য অবশ্যই ভাতাভোগীর নিজ জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে, সমাজসেবা অফিসের নিদের্শনামত খুললে ভাল হয়। মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট করার জন্য বিকাশ, রকেট বা নগদ একাউন্ট খুলতে হবে।
বয়স্ক ভাতা কি
বয়স্ক ভাতা হচ্ছে সরকারের একটি আর্থিক কর্মসূচি যার মাধ্যমে যে বয়স্ক, দুস্থ, কর্মহীন ও স্বল্প আয়ের লোকদের আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হয়।
সরকারি এই আর্থিক সহযোগিতা পাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। কর্তৃপক্ষ আবেদন ও কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে আবেদনকারীকে বয়স্ক ভাতার প্রাপ্তির জন্য বিবেচনা করলেই বয়স্ক ভাতা দেয়া হবে।
বাংলাদেশে বয়স্ক ভাতা চালু হয় কত সাল থেকে
বাংলাদেশে বয়স্ক ভাতা চালু হয় ১৯৯৮ সাল থেকে। দেশের অভাবী ও নিম্ন আয়ের বয়স্ক ব্যক্তিদের সামাজিক নিরাপত্তা প্রদানের জন্য ১৯৯৭-১৯৯৮ অর্থবছরে প্রথম বয়স্ক ভাতা কর্মসূচি চালু করা হয়।
প্রথমে দেশের সকল ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিটি ওয়ার্ডে ৫ জন পুরুষ ও ৫ জন মহিলা সহ ১০ জন দরিদ্র বৃদ্ধকে প্রতি মাসে ১০০ টাকা ভাতার আওতায় আনা হয়। পরবর্তীতে দেশের সকল পৌরসভা ও নগর প্রতিষ্ঠানকে এই কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং ভাতাভোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়।
বাংলাদেশে বয়স্ক ভাতা কত টাকা ২০২৩
বাংলাদেশে বয়স্ক ভাতার পরিমাণ মাসিক ৫০০ টাকা। বয়স্ক ভাতা যা দেয়া হয় তা খুবই কম। তবে এটি হয়তো ভবিষ্যতে পরিবর্তনশীল।
পূর্ববর্তী বিভিন্ন বছরে বয়স্ক ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। তাই আশা করা যায় খুব শিগ্রই এই ভাতার পরিমাণ সরকারি বৃদ্ধি করবে।
অর্থবছর | মাসিক ভাতার পরিমাণ |
---|---|
২০০৯-১০ | ২৫০ টাকা |
২০১০-১১ | ৩০০ টাকা |
২০১৬-১৭ | ৫০০ টাকা |
বয়স্ক ভাতা কত বছর বয়সে দেওয়া হয়
বয়স্ক ভাতার জন্য আবেদন করতে পুরুষের বয়স ৬৫ বছরের উর্দ্ধে এবং মহিলার বয়স ৬২ বছরের উর্দ্ধে হতে হবে।
শেষকথা
বয়স্ক ভাতার আবেদন যখন তখন করা যাবে না। সাধারণত বছরের শুরুতেই এই তালিকা প্রণয়নের কাজ করা হয়। তাই খেয়াল রাখুন কখন বয়স্ক ভাতার আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে।
ওই নির্দিষ্ট সময়েই বয়স্ক ভাতার জন্য অনলাইনে আবেদন করে, চেয়ারম্যান বা পৌরসভা কাউন্সিলরেরস স্বাক্ষর নিয়ে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদন জমা দিন।
বয়স্ক ভাতার আবেদন নিয়ে কোন প্রশ্ন? নিচের প্রশ্নের উত্তরগুলো দেখুন। উত্তর না পেলে অবশ্যই কমেন্টে আপনার প্রশ্ন করুন।
বয়স্ক ভাতা নিয়ে সাধারণ কিছু প্রশ্নের উত্তর
বয়স্ক ভাতার পরিমাণ মাসিক ৫০০ টাকা।
বয়স্ক ভাতা চালু হয় ১৯৯৮ সাল থেকে। দেশের অভাবী ও নিম্ন আয়ের বয়স্ক ব্যক্তিদের সামাজিক নিরাপত্তা প্রদানের জন্য ১৯৯৭-১৯৯৮ অর্থবছরে প্রথব বয়স্ক ভাতা কার্যক্রম চালু করা হয়।
বয়স্ক ভাতা পাওয়ার জন্য একজন পুরুষের বয়স ৬৫ বছর এবং মহিলার বয়স ৬২ বছরের উর্দ্ধে হতে হয়।
পুরুষের বয়স ৬৫ বছর এবং মহিলার বয়স ৬২ বছরের উর্দ্ধে হলে বয়স্ক ভাতা পাওয়ার আবেদন করা যায়।
বয়স্ক ভাতা এর সুবিধা পেতে কি কোন টাকা দিতে হবে?
না, কোন টাকা লাগে না।