ফ্রিল্যান্সার ও ব্লগারদের জন্য গ্রিসের ডিজিটাল নোম্যাড ভিসা চালু

গ্রীসের ডিজিটাল নোম্যাড ভিসা প্রোগ্রাম ২০২৩ এর আওতায় নন-ইউরোপীয় বিশেষ পেশার ব্যক্তিরা কোন জব অফার বা ওয়ার্ক পারমিট ছাড়াই সেই দেশে বসবাস ও ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করতে পারবেন।

Advertisement

ডিজিটাল নোম্যাড ভিসা শুধুমাত্র সেইসব ফ্রিল্যান্স ওয়ার্কারদের জন্য যারা ঘরে বসে বিশ্বের যে কোন দেশের কোম্পানী বা প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করতে পারেন। যেমন, ব্লগার, ইউটিউবার, ডেভলপার বা অন্য যে কোন ফ্রিল্যান্স কাজ করেন তারা এই ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।

তবে, Greece Digital Nomad Visa আবেদন করার জন্য আপনার মাসিক একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ আয় করতে হবে। জানা যায়, এখন পর্যন্ত প্রায় গ্রীস ১৬৯৩টি ডিজিটাল নোম্যাড ভিসা অনুমোদন করেছে।

আসুন Greece Digital Nomad Visa আবেদন করতে কি কি লাগবে, আবেদনের শর্ত সম্পর্কে বিস্তারিত জানি।

Advertisement

ডিজিটাল নোম্যাড ভিসা কি

ডিজিটাল নোম্যাড ভিসা হল এক ধরনের ভিসা যেটি সেই দেশে বসবাস করে বিশ্বের যে কোন প্রতিষ্ঠানের জন্য অনলাইন নির্ভর কাজ করার সুযোগ দেয়। ফ্রিল্যান্স ওয়ার্কার, ব্লগার, ইউটিউবার, সফটওয়্যার ডেভলপার এই ধরনের পেশার মানুষ ডিজিটাল নোম্যাড ভিসা পেতে পোরে।

Greece Digital Nomade Visa হলো নন ইউরোপীয় রিমোট ওয়ার্কারদের জন্য ট্রাভেল ভিসা যার মাধ্যমে গ্রিসে বসবাস ও গ্রিসের বাইরের যে কোন প্রতিষ্ঠানের জন্য ঘরে বসে কাজ করতে পারবেন। এই ভিসা পেতে গ্রিসের কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান থেকে জব অফার প্রয়োজন হবে না।

এই ভিসার মেয়াদ প্রাথমিকভাবে ১ বছরের জন্য এবং পরে বৃদ্ধি করা যাবে। এই ভিসার একটি উল্লেখযোগ্য সুবিধা হল অন্যান্য ইউরোপীয় শেনজেন দেশ এবং তার বাইরে ভ্রমণে সুবিধা রয়েছে।

Advertisement

আরও পড়ুন:

এই ভিসার জন্য আপনার আবেদন প্রক্রিয়া করতে 10 দিন বা এক মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

ডিজিটাল নোম্যাড ভিসার জন্য অবশ্যই আবেদনকারীকে ফ্রিল্যান্স পদ্ধতিতে কাজ করে আয় করতে হবে। যেমন ইউটিউবার, ব্লগার, ট্রাভেল ব্লগার, ফ্রিল্যান্স লেখক, ডেভলপার বা অন্য যেকোন কাজ।

যদি দূর থেকে কোনো কোম্পানির জন্য কাজ করেন, সেক্ষেত্রে আপনাকে জব কনফার্মেশন লেটার বা এধরণের কোন নির্ভরযোগ্য প্রমাণ দেখাতে হবে। ফ্রিল্যান্সার হলে, মার্কেটপ্লেসের প্রোফাইল এবং ব্লগার বা ইউটিউবার হলে এডসেন্স প্রোফাইল ও পেমেন্ট প্রোফাইল দেখাতে পারেন।

Advertisement

নীচে, আপনি গ্রীস ডিজিটাল নোম্যাড ভিসা 2023 সম্পর্কে আরও তথ্য পাবেন।

Greece Digital Nomad ভিসা আবেদনের শর্ত

গ্রীস ডিজিটাল নোম্যাড ভিসা পাওয়ার জন্য আপনাকে নিন্মোক্ত শর্ত পালন করতে হবে:

  • অবশ্যই নন ইউরোপীয় নাগরিক
  • প্রমাণ করতে হবে যে আপনি রিমোর্ট ওয়ার্কার বা ফ্রিল্যান্সার
  • গ্রীসের বাইরের কোন রেজিস্টার্ড কোম্পানীর সাথে কাজের চুক্তি আছে, বা সেই কোম্পানীতে কাজ করে আয় করছেন
  • অক্টোবর 2023 অনুযায়ী, আপনার মাসিক আয় কমপক্ষে 3,500 ইউরো হতে হবে। আর স্ত্রী ও সন্তানসহ আবেদন করলে মাসিক আয় কমপক্ষে 4,830 ইউরো হতে হবে।

ডিজিটাল নোম্যাড ভিসার জন্য কত টাকা লাগে

  • €75 ইউরো আবেদন ফি;
  • €150 ইউরো প্রশাসনিক ফি;
  • রেসিডেন্সিয়াল বুকিং বা হোটেল ভাড়ার ফি
  • মেডিক্যাল টেস্ট সার্টিফিকেট ফি;
  • রিটার্ন ফ্লাইট টিকেট ফি বাবদ খরচ।

ডিজিটাল নোম্যাড ভিসার জন্য কি কি লাগে

গ্রীসের ডিজিটাল নোম্যাড ভিসার জন্য আপনার নিম্মোক্ত কাগজপত্রগুলো প্রয়োজন হবে:

  • বৈধ পাসপোট: রিটার্ন হওয়ার তারিখের পর আরও কমপক্ষে ৬ মাস মেয়াদ আছে এমন পাসপোর্ট। পাসপোর্টে অবশ্যই ২ পাতা খালি থাকতে হবে।
  • ডিকলারেশন লেটার: আপনি কেন গ্রিসে থাকতে চান, আপনার পেশা এবং আর্থিক প্রয়োজনীয়তা মেটাতে পারবেন এসব তথ্য দিয়ে একটি কভার লেটার লিখতে হবে।
  • পেশার প্রমাণ: আপনাকে অবশ্যই একটি Employment Contract Letter বা আপনি যে ফ্রিল্যান্সার বা ব্লগার হিসেবে কাজ করছেন তার একটি প্রমাণ দেখাতে হবে।
  • আয়ের প্রমাণ: আপনাকে ব্যাংক স্টেটমেন্ট বা কোম্পানী থেকে পাওয়া পেমেন্ট রিসিট দেখাতে হবে।
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স: আপনার বিরুদ্ধে কোন Criminal Record নাই এই ব্যপারে বাংলাদেশ পুলিশ থেকে দেয়া পুলিশ ক্লিয়ারেন্স নিতে হবে। পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য আবেদন করতে পারেন অনলাইনে।
  • গ্রীসে বাসস্থানের ঠিকানা: আপনি গ্রীসে কোথায় অবস্থান করবেন তার একটি ঠিকানা দিতে হবে। এজন্য আপনাকে হয়তো কোন বাসা ভাড়ার এগ্রিমেন্ট বা হোটেল বুকিংয়ের তথ্য দিতে হবে।
  • মেডিকেল ফিটনেস সার্টিফিকেট: আপনাকে একটি Medical Test Report দেখাতে হবে যে আপনি সুস্থ এবং আপনার কোন সংক্রামক রোগ নেই।
  • রিটার্ন ফ্লাইট টিকেট: রিটার্ন ফ্লাইটের টিকিট প্রদান করে আপনাকে প্রমাণ করতে হবে যে আপনি আপনার দেশে ফিরে যাবেন।

গ্রীস ডিজিটাল নোম্যাড ভিসা আবেদন করার নিয়ম

গ্রীসের ডিজিটাল নোম্যাড ভিসা আবেদন করার জন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন:

Advertisement
  • প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র সংগ্রহ করুন: ভিসা আবেদনের জন্য, আপনার পেশা বা কাজের প্রমাণ সংক্রান্ত কাগজপত্র, পাসপোর্ট এবং অন্যান্য কাগজ যোগাড় করুন।
  • গ্রীক কনস্যুলেটে এপয়েন্টমেন্ট নিন: বাংলাদেশে গ্রীসের এম্বাসী নেই তবে কনস্যুলেট অফিস রয়েছে। নিচে গ্রীস কনস্যুলেট ঢাকার ঠিকানা দেয়া হলো।
  • ভিসা আবেদন সম্পন্ন করুন: এপয়েন্টমেন্টের তারিখে কনস্যুলেটে উপস্থিত হয়ে, ভিসা আবেদন সম্পন্ন করুন এবং ভিসা ফি পরিশোধন করুন।
  • ভিসা আবেদন অনুমোদনের অপেক্ষা করুন: আবেদন শেষে আপনাকে ১০ দিন থেকে ১ মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে।
  • রেসিডেন্সি পারমিট রেজিস্ট্রেশন করুন: ডিজিটাল নোম্যাড ভিসা নিয়ে গ্রীসে প্রবেশের পর ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্ট থেকে আপনার রেসিডেন্সি পারমিট রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এজন্য আপনার প্রয়োজন হবে, হোটেল বুকিং কনফার্মেশন বা রেসিডেন্সিয়াল লিজ, ভিসা এবং পাসপোর্ট।

গ্রীস ডিজিটাল নোম্যাড ভিসা রিনিউ

গ্রীসের ডিজিটাল নোমেড ভিসা প্রতি ১ বছর পর পর আবেদনের যোগ্যতা সাপেক্ষে রিনিউ করা যাবে।

ডিজিটাল নোম্যাড ভিসার ব্যক্তিদের জন্য আয়কর

ডিজিটাল নোম্যাড ভিসায় আপনার গ্রীসে থাকা ছয় মাসের কম হলে, আপনাকে কোন ট্যাক্স দিতে হবে না। অর্থাৎ প্রথম ৬ মাসের জন্য আপনাকে কোন ট্যাক্স দিতে হবে না। ছয় মাস অতিক্রম করলে, ট্যাক্স বাধ্যবাধকতা কার্যকর হবে।

গ্রীক আইন অনুযায়ী, আপনার মাসিক আয়ের অর্ধেক ট্যাক্সের অধীন হবে না। Digital Nomad ভিসায় যারা আসবেন তাদের প্রথম সাত বছরের জন্য এই নিয়ম প্রযোজ্য।

গ্রীসে রিমোট ওয়ার্কারদের জন্য জনপ্রিয় স্থান

ইউরোপে অবস্থিত গ্রীস তার অত্যাশ্চর্য প্রাকৃতিক দৃশ্য, দ্বীপ, সৈকত এবং খাবারের জন্য বেশ পরিচিত। এখানে রিমোট ওয়ার্কার বা ফ্রিল্যান্সারদের কিছু জনপ্রিয় শহর রয়েছে যেখান থেকে কাজ করতে তাদের সুবিধা হয়।

1. Athens

এথেন্স হচ্ছে গ্রীসের রাজধানী শহর। জীবনযাত্রার সাশ্রয়ী মূল্যের কারণে ডিজিটাল নোম্যাড ভিসায় যারা আসেন তাদের জন্য এটি একটি ভাল গন্তব্য। শহরটিতে অ্যাক্রোপলিসের মতো ঐতিহাসিক স্থান, বিভিন্ন জাদুঘর এবং অসংখ্য গীর্জা রয়েছে।

এথেন্সে প্রায় ৪০টি Co-Working Space আছে যেখানে আপনি আসবাবপত্র, কম্পিউটার, ইন্টারনেট সহ সকল কাজ করার সুবিধা ভাড়া দিয়ে পাবেন।

যাদের ঘরে কাজ করার সুবিধা নেই, বা কাজ করতে অসুবিধা হয় তারা যেখানে বসেও আপনার অফিস বা কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন।

2. Thessaloniki

থেসালোনিকিতে ছয়টি Coworking Place রয়েছে যা আপনার কাজের জন্য উপযুক্ত অবস্থান হতে পারে। এই বন্দর শহরটিতে থেসালোনিকির হোয়াইট টাওয়ার, হ্যাগিওস ডেমেট্রিওস, অ্যারিস্টোটেলাস স্কোয়ার, প্রাণবন্ত লাদাডিকা জেলা এবং আরও অনেক আকর্ষণীয় স্থান রয়েছে।

3. Santorini

অনেকের কাছে সান্তোরিনি একটি স্বপ্নের গন্তব্য। এখান থেকে কাজ করার পাশাপাশি দ্বীপের সৈকত, আইকনিক হোয়াইট হাউস এবং বাতিঘর উপভোগ করতে পারেন।

4. Rhodes

রোডসের মধ্যযুগীয় স্থাপত্য, মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং মনোমুগ্ধকর স্থান রয়েছে। এই শহরটিও রিমোট ওয়ার্কার ও ফ্রিল্যান্সারদের জন্য সুবিধাজনক হতে পারে।

গ্রীক কনস্যুলেট, ঢাকা

Address: EP-32, Dr S. Radhakrishnan Marg, Chanakyapuri, New Delhi 110021
Tel. : (009111) 26880700-4, Emergency tel: 0091 9654616196
E-mail : [email protected] [email protected]
Website : www.mfa.gr/india

শেষ কথা

যেসব ফ্রিল্যান্সার, ব্লগার বা কনটেন্ট ক্রিয়েটর অথবা রিমোট ওয়ার্কার যারা ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন অথবা ইউরোপের কোন দেশে বসবাস করতে চান, তারা এই ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন।

Advertisement

Similar Posts

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।