অস্ট্রেলিয়া কাজের ভিসা ২০২৩ | অস্ট্রেলিয়া যেতে কত টাকা লাগে

অস্ট্রেলিয়া কাজের ভিসায় যেতে চান? জেনে নিন সরকারিভাবে অস্ট্রেলিয়া কাজের ভিসা পাওয়ার উপায়, কত টাকা লাগে ও আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত।

Advertisement

বিশ্বের অন্যতম উন্নত ও ৬ষ্ঠ বৃহত্তম দেশ হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। উন্নত জীবনযাপন ও বেশি উপার্জনের জন্য অস্ট্রেলিয়া যেতে অনেকেই আগ্রহী। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া কোন এজেন্সি কিংবা সংস্থা অস্ট্রেলিয়া কাজের ভিসা দিতে পারেনা।

তাই আপনাদের প্রয়োজনে ও প্রতারণা থেকে বাঁচতে অস্ট্রেলিয়া কাজের ভিসা সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য নিচে তুলে ধরা হলো।

অস্ট্রেলিয়া কাজের ভিসা

অস্ট্রেলিয়ায় কাজের ভিসা পেতে সরকারি চাকরির ওয়েবসাইট https://immi.homeaffairs.gov.au/ ও অন্যান্য জব সাইটে আবেদন করতে হয়। এক্ষেত্রে নিজের পছন্দমত নির্দিষ্ট পেশায় এবং নির্দিষ্ট এলাকায় চাকরি পাওয়া যায়। তবে এজন্য সে কাজে পূর্বদক্ষতা ও অভিজ্ঞতার প্রয়োজন। সরকারিভাবে কাজের ভিসায় অস্ট্রেলিয়া যেতে ৩-৪ লক্ষ টাকা খরচ হয়।

অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়ান আত্মীয়ের মাধ্যমেও অস্ট্রেলিয়ান ভিসা পেতে ও প্রসেসিং করতে পারবেন। বেসরকারি তত্ত্বাবধানে অস্ট্রেলিয়া যেতে ৭-১০ লক্ষ টাকা বা তারও বেশি খরচ হয়।

পৃথিবীর উন্নত রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে একটি অস্ট্রেলিয়া। তবে উন্নত সেই দক্ষ জনশক্তির দেশে শ্রমশক্তির পরিমাণ খুবই কম। তাই প্রতিবছর অন্যান্য দেশ থেকে কর্মী সংগ্রহ করে থাকে অস্ট্রেলিয়া। সরকারি ও বেসরকারি তত্ত্বাবধানে কাজের ভিসায় অস্ট্রেলিয়া যাওয়া যায়।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশের জন্য কোন কোন দেশের ভিসা খোলা আছে

Advertisement

সরকারিভাবে অস্ট্রেলিয়া কাজের ভিসা পাওয়ার উপায়

সরকারিভাবে অস্ট্রেলিয়ায় কাজের কাজের ভিসার জন্য সরকারি দক্ষ জনশক্তি নিয়োগকারী ওয়েবসাইটে আবেদন করতে হবে। দক্ষ জনশক্তির আওতায় বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়ায় নিম্নোক্ত কাজগুলোর জন্য আবেদন করা যাবে-

  • সেফ;
  • ওয়েল্ডার;
  • স্টন মেসন;
  • বয়লার মেকার;
  • প্লাম্বার;
  • নার্স;

প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস ও দক্ষতার প্রমাণপত্র নিয়ে অস্ট্রেলিয়ান এম্বাসি কিংবা সরাসরি অনলাইনে আবেদন করে ভিসা সংগ্রহ করতে পারবেন।

সরকারিভাবে কাজের ভিসায় অস্ট্রেলিয়া যাওয়া তুলনামূলক কঠিন। শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কাজে দক্ষ ব্যক্তিরাই এ সুযোগ পেতে পারে। বর্তমান অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী- অ্যান্টনি আলবানিজের লেবার পার্টির সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন নীতিতে বেশ কিছু পরিবর্তন করেছে।

লেবার সরকার ২০২২-২০২৩ সালে দক্ষ ও পারিবারিক ভিসার জন্য স্থায়ী মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম ১ লক্ষ্য ৬০ হাজার থেকে বৃদ্ধি করে ১ লক্ষ ৯৫ হাজার ঘোষণা করা হয়েছে।

Advertisement

পরবর্তীতে অক্টোবর মাসের বাজেটে বলা হয়েছে যে, প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে উপলব্ধ দক্ষ ভিসার সংখ্যা ৭৯ হাজার ৬০০ থেকে বৃদ্ধি করে ১ লাখ ৪২ হাজার ৪০০ করা হবে।

অস্ট্রেলিয়া কাজের ভিসা পেতে কি কি লাগে

  • কমপক্ষে ছয় মাস মেয়াদ সম্পূর্ণ ভ্যালিড পাসপোর্ট (পাসপোর্ট এর কমপক্ষে তিনটি পৃষ্ঠা ফাঁকা থাকতে হবে);
  • এনআইডি কার্ডের কপি;
  • সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড ওয়ালা চার কপি রঙিন পাসপোর্ট সাইজের ছবি;
  • বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার ক্ষেত্রে বয়সসীমা ১৮-৪৫ বছর;
  • ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার সার্টিফিকেট হিসেবে আইইএলটিএস (IELTS) সার্টিফিকেট। আইইএলটিএস স্কোর সর্বনিম্ন ৬ হতে হবে;
  • অস্ট্রেলিয়ান ভিসা ফরম;
  • স্বাস্থ্য বীমা;
  • করোনা ভ্যাকসিনেশন সার্টিফিকেট;
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট;
  • মেডিকেল রিপোর্ট;
  • ব্যাংক সলভেন্সি স্টেটমেন্ট;
  • আয়ের উৎসের প্রমাণপত্র;
  • অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানের ঠিকানা ও নিয়োগ কর্তার ঠিকানার তথ্য;
  • নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের ডকুমেন্টস;
  • অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানকারী কোন আত্মীয় ভিসা প্রসেসিং করলে তার আমন্ত্রণ পত্র।

অস্ট্রেলিয়া জব ওয়েবসাইট 

অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত কয়েকটি ওয়েবসাইটে চাকরির খবরা-খবর ও বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। অস্ট্রেলিয়া কাজের ভিসার জন্য সরকারি ওয়েবসাইটটি হলো- https://immi.homeaffairs.gov.au/visas/working-in-australia। 

অস্ট্রেলিয়া কাজের জন্য সরকারি ওয়েবসাইটে কোন ধরনের কাজ দেয়া হবে এবং কতজন লোক কখনো নিয়োগ হবে সেসব সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য শেয়ার করা হয়। এখানে পেশা ও কোম্পানির নাম লিখে অনুসন্ধান করা যায়।

একইসাথে- সিইও এন্ড জেনারেল ম্যানেজমেন্ট,  কল সেন্টার এবং কাস্টমার সার্ভিস, কন্সট্রাকশন কনসাল্টিং, স্ট্রাটেজি ডিজাইন, আর্কিটেকচার, এডুকেশন, কমিউনিটি সার্ভিস, ডেভেলপমেন্ট ইত্যাদি অপশন থাকবে। সেখান থেকে ক্যাটাগরি সিলেক্ট করে চাকরি অনুসন্ধান করতে পারেন।

Advertisement

এছাড়াও আরো কিছু ওয়েবসাইট রয়েছে, যা অস্ট্রেলিয়ার কাজের বিজ্ঞপ্তি দিয়ে থাকে। যেমন-

  1. https://www.seek.com.au/ – নিজের পছন্দমত জব ক্যাটাগরি ও অস্ট্রেলিয়ার শহর নির্বাচন করে Seek অপশনে ক্লিক করলেই বিভিন্ন কাজের বিজ্ঞপ্তি দেখা যায়।
  2. https://www.y-axis.com/visa/work/australia/এখানেও অস্ট্রেলিয়ায় বিভিন্ন কাজ সম্পর্কে জানতে পারবেন।

অস্ট্রেলিয়া কাজের ভিসার আবেদন করার নিয়ম

অস্ট্রেলিয়া কাজের ভিসার জন্য সরাসরি অস্ট্রেলিয়ান এম্বাসি, এজেন্সি এজেন্টের মাধ্যমে আবেদন করতে পারেন। তবে সরকারিভাবে অল্প টাকায় অস্ট্রেলিয়া ভিসা পেতে নিম্নোক্তভাবে আবেদন করতে হবে-

ধাপ ১: অস্ট্রেলিয়া চাকরির ওয়েবসাইটে ভিজিট

উপরে উল্লেখিত ওয়েবসাইট গুলোতে নিয়মিত খেয়াল রাখতে হবে। নিজের যোগ্যতার সাথে মিলে যায় চাকরি খুঁজে আবেদন করতে হবে।

ধাপ ২: প্রফেশনাল সিভি তৈরি

চাকরিতে আবেদনের জন্য পূর্বেই একটি প্রফেশনাল বায়োডাটা/জীবন বৃত্তান্ত/সিভি তৈরি করতে হবে। এতে আপনার কর্মদক্ষতা ও যোগ্যতা, ব্যক্তিগত তথ্য, আইইএলটিএস স্কোর সহ অন্যান্য তথ্য ও ডকুমেন্ট এটাচ করতে হবে। (অবশ্যই সঠিক তথ্য প্রদান করতে হবে।)

ধাপ ৩: কোম্পানিতে চাকরির আবেদন

নির্দিষ্ট কোম্পানি ও চাকরি নির্বাচনের পর সেই কোম্পানির ইমেইল ঠিকানা ও যোগাযোগ মাধ্যম সংগ্রহ করুন (চাকরির ওয়েবসাইট থেকেই)। তারপর একটি সুস্পষ্ট কভার লেটার সহ আপনার সিভি পিডিএফ ফরমেটে আপলোড করে কোম্পানির মেইল এড্রেসের ইমেইল করুন।

ধাপ ৪: যোগ্যতা ও দক্ষতা বাছাইকরন

অস্ট্রেলিয়ান কোম্পানিগুলোতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোক নিয়োগ দেওয়া হয়। তাই কোন কাজে এক্সপার্ট না হলে নিয়োগ পাওয়া কঠিন। 

কোম্পানিতে আপনার যোগ্যতা ও দক্ষতা অনুযায়ী বাছাই করা হলে পরবর্তীতে ইমেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হবে। তারপর অস্ট্রেলিয়ান এম্বাসির মাধ্যমে ভিসা প্রসেসিং, বায়োমেট্রিক ও অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

ধাপ ৫: বিভিন্ন কোম্পানিতে আবেদন

কর্মী নিয়োগের সংখ্যা, সেলারি ও অন্যান্য বিষয় বিবেচনায় রেখে একাধিক কোম্পানিতে আবেদন করতে হবে। ফলে কোন একটিতে সিলেক্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

আপনি অস্ট্রেলিয়া কাজের ভিসা পেতে আগ্রহী হলে এসকল সাইটে নিয়মিত খেয়াল রাখতে হবে। এবং বিভিন্ন ওয়েবসাইটে আবেদন করতে থাকলে এপ্লিকেশন কোয়ালিটি উন্নত হবে।

অস্ট্রেলিয়া ভিসা প্রসেসিং

সাধারণত অস্ট্রেলিয়ার কাজের ভিসা কোন এজেন্ট বা সংস্থার মাধ্যমে পাওয়া যায়নি। তাই কোন দালাল অস্ট্রেলিয়া ভিসার আশ্বাস দিলে তা প্রতারণা হতে পারে। নিরাপত্তার জন্য অস্ট্রেলিয়া ভিসা পেতে আগ্রহীদের অবশ্যই অস্ট্রেলিয়ান ইমিগ্রেশনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে (https://immi.homeaffairs.gov.au/) আবেদন করে যোগ্যতা অনুযায়ী ভিসা সংগ্রহ করতে হবে। 

অস্ট্রেলিয়া যেতে কত টাকা লাগে

সরকারিভাবে অস্ট্রেলিয়া ভিসা প্রসেসিং করতে সাধারণত তিনটি ক্যাটাগরিতে ভিসার খরচ হয়। যথা-

  1. স্পন্সর খরচ- AUD 2770 (বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ২,৭০,০০০ টাকা);
  2. ভিসা খরচ- AUD 325 (বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৩২,৫০০ টাকা);
  3. ভিসা কনসালটেন্সি, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, মেডিকেল ও অন্যান্য খরচ।

সকল খরচ মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়া ভিসা খরচ প্রায় ৩-৪ লক্ষ টাকা।

অস্ট্রেলিয়া কৃষি কাজের ভিসা

অস্ট্রেলিয়ায় কৃষি কাজের জন্য মৌসুমভিত্তিক কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়। অন্যান্য কাজের তুলনায় কৃষি কাজের ভিসায় অস্ট্রেলিয়া যাওয়া সহজ এবং খরচ কম। কৃষিকাজে শ্রমিকদের বেতন সর্বনিম্ন বাংলাদেশী টাকায় ৬০ হাজার থেকে শুরু করে ২.৫-৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। 

নিম্নোক্ত কাজগুলোতে অস্ট্রেলিয়া কৃষিকাজের ভিসা দেওয়া হয়-

  1. গবাদি পশু পালন;
  2. আঙ্গুর বাগানে কাজ;
  3. কমলার বাগানে কাজ;
  4. ফুলের বাগানে কাজ;
  5. বাগান বা খামার ক্লিনার।

কৃষি কাজের ভিসার জন্য অস্ট্রেলিয়ার সরকারি ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সেখানে আবেদন করতে পারেন। অথবা এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করা যায়। 

অস্ট্রেলিয়া কৃষি কাজের ভিসা খরচ

কৃষি কাজের ভিসায় অস্ট্রেলিয়া যেতে ৬-৮ লক্ষ টাকা খরচ হয়। এক্ষেত্রে আইইএলটিএস স্কোর ও অন্যান্য ডকুমেন্টস লাগে। ভিসা প্রসেসিং ও স্পন্সর খরচ অন্যান্য কাজের ভিসার মতোই। তবে প্রসেসিং এজেন্সিকে বাড়তি টাকা দিতে হয়।

অস্ট্রেলিয়া কাজের ভিসা পাওয়ার সহজ উপায়

অস্ট্রেলিয়াতে কাজের ভিসা পাওয়ার সহজ উপায় হচ্ছে সরকারিভাবে কর্মী নিয়োগকারী ওয়েবসাইট গুলোতে আবেদন করা। এ সকল ওয়েবসাইট থেকে স্বল্প খরচে ও নিরাপদে অস্ট্রেলিয়া ভিসা পেতে পারেন। তাই উপরে উল্লেখিত ওয়েবসাইট গুলোতে নিয়মিত আবেদন করুন।

শেষকথা

অস্ট্রেলিয়া কাজের ভিসায় বা ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় নিয়োগের পরিমাণ তুলনামূলক কম। তাছাড়া দক্ষতা ব্যাতীত অস্ট্রেলিয়ায় নিয়োগ পাওয়া কঠিন। তাই সরকারিভাবে অস্ট্রেলিয়া যেতে কত টাকা লাগে তা জেনে সঠিকভাবে ভিসা সংগ্রহ করতে হবে।

অস্ট্রেলিয়া ওয়ার্ক পারমিট ভিসা সম্পর্কে সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ’s)

বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া যেতে কত টাকা লাগে

অস্ট্রেলিয়া ভিসা আবেদন খরচ- AUD 325, যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৩২,৫০০ টাকা। তবে স্পন্সর খরচ ও অন্যান্য সকল খরচ সহ বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় যেতে ৭-১০ লক্ষ টাকা লাগে। বাংলাদেশ থেকে অস্থায়ী ভিসায় অস্ট্রেলিয়া যেতে সর্বমোট ৬ লক্ষ টাকা লাগতে পারে।

অস্ট্রেলিয়া যেতে বয়স কত লাগে?

বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার ক্ষেত্রে বয়সসীমা ১৮-৪৫ বছর।

অস্ট্রেলিয়া যেতে IELTS স্কোর কত লাগে?

অস্ট্রেলিয়া যেতে ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা হিসেবে আইইএলটিএস (IELTS) স্কোর সর্বনিম্ন ৬ হতে হবে।

Advertisement

Similar Posts

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।