ইন্ডিয়ান টুরিস্ট ভিসা করতে কি কি লাগে ২০২৪

ইন্ডিয়ান টুরিস্ট ভিসার জন্য কি কি কাগজপত্র লাগে যদি আগে থেকে তা না জানেন, সেক্ষেত্রে আপনি ভিসার জন্য আবেদন করতে গিয়ে কিছুটা ঝামেলায় পড়তে পারেন।

Advertisement

ভিসার জন্য যথোপযুক্ত সকল ডকুমেন্ট জমা না করলে হয়তো আপনার ভিসা আবেদন বাতিলও হতে পারে।

তাই আপনার বুঝতে হবে যে কোন ডকুমেন্টস গুলো জমা দিতে হবে এবং কোন ডকুমেন্টস গুলো না দিলেও হবে বা আপনার অবস্থান অনুযায়ী কোনটি দিতে হবে।

যাই হোক, এই ব্লগে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো ইন্ডিয়ান টুরিস্ট ভিসা করতে কি কি লাগে এবং সেই কাগজপত্র গুলোর সম্পর্কে বিস্তারিত যাতে আপনি সহজে বুঝতে পারেন কোন কাগজ আপনার জন্য দিতে হবে আর কোন কাগজ আপনাকে দেয়ার দরকার হবে না। আসুন তাহলে শুরু করা যাক।

Advertisement

ভিসা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য:

ইন্ডিয়ান টুরিস্ট ভিসা করতে কি কি লাগে

ইন্ডিয়ান টুরিস্ট ভিসার জন্য মূলত পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধন, ছবি, Utility bill, Bank statement, Corona vaccine certificate ইত্যাদি কাগজপত্র লাগে। ভিসা আবেদনের জন্য যে সমস্ত কাগজপত্র লাগে, তার তালিকা নিচে দেয়া হলো।

ইন্ডিয়ান টুরিস্ট ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলো হলো:

Advertisement
  • ভিসার জন্য আবেদন পত্র (অনলাইনে পূরণীয়);
  • সাম্প্রতিক সময়ে তোলা দুই কপি ছবি যা ইঞ্চিতে হবে 2×2 সাইজের, ব্যাকগ্রাউন্ড সাদা, কান দৃশ্যমান থাকতে হবে;
  • জাতীয় পরিচয় পত্র অথবা জন্ম নিবন্ধনের একটি ফটোকপি;
  • বিদ্যুৎ বিল / ওয়াসা বিল / গ্যাস বিল এর যেকোনো একটির ফটোকপি;
  • বিগত ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট অথবা ১৫০ ডলার এনডোর্সমেন্ট;
  • জমির খতিয়ান / NOC / Trade License / Student ID এর ফটোকপি;
  • পাসপোর্টের একটি ফটোকপি;
  • পূর্বে ভারতে গিয়ে থাকলে সেই ভিসার ফটোকপি;
  • করোনার টিকা সনদ;
  • মেইন পাসপোর্টও দরকার হবে;
  • Old Passport বা পুরানো পাসপোর্ট থাকলে সেগুলোও নিতে হবে;
  • পুরোনো পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে জিডির কপি;

এখানে যেসকল ডকুমেন্টস পর্যায়ক্রমে উল্লেখ করা হয়েছে, যেসকল ডকুমেন্টস এভাবেই পর্যায়ক্রমে উপর থেকে নিচের দিকে রেখে পিন আপ করে নিলে হবে।

তবে পাসপোর্ট ডকুমেন্টস গুলোর সাথে পিন আপ করার দরকার নেই। বাকি সব ডকুমেন্টস যেটার পর ‍যেটা উল্লেখ করা হয়েছে, সেইটার পর সেইটাই দিতে হবে।

১. ভিসার আবেদন পত্র

ভারতীয় ভিসার জন্য আপনাকে আপনার ডকুমেন্টস ফলো করে অনলাইনে ইন্ডিয়ান ভিসা আবেদন করতে হবে। অবশ্যই এটি খুবই সাবধানতার সাথে করবেন। তারপর Application Form টি ডাউনলোড করে তা প্রিন্ট করে নিবেন। পরবর্তিতে অন্যান্য ডকুমেন্টস সহ এটি ইন্ডিয়ান ভিসা সেন্টারে জমা দিতে হবে।

ভিসার আবেদন করতে পারবেন এই লিংকে গিয়ে – Indian Visa Application । তাছাড়া, ভিসা আবেদন অনুমোদন হয়েছে কিনা তা জানার জন্য আবার অনলাইনেই ইন্ডিয়ান ভিসা চেক করা যাবে।

Advertisement

২. সাম্প্রতিক সময়ে তোলা দুই কপি ছবি

ছবি হতে হবে সাম্প্রতিক সময়ে তোলা এমন। সেই সাথে ব্যাকগ্রাউন্ড হতে হবে সাদা এবং দুকান খোলা থাকতে হবে। আর ছবি গুলোর সাইজ হতে হবে 2×2 ইঞ্চি। ছবি গুলো আঠা দিয়ে ভিসার আবেদন পত্রে সংযুক্ত করতে হবে।

৩. জাতীয় পরিচয় পত্র অথবা জন্ম নিবন্ধনের ফটোকপি

আপনি আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র অথবা জন্ম নিবন্ধনের যেকোনো একটির ফটোকপি দিতে পারেন। তবে এর সাথে আপনার পাসপোর্টের তথ্য মিল থাকতে হবে। তাই পাসপোর্ট করার সময় যে পরিচয় পত্র ব্যবহার করেছেন সেটি ব্যবহার করুন।

৪. ইউটিলিটি বিলের ফটোকপি

আপনার বিদ্যুৎ বিল / ওয়াসা বিল / গ্যাস বিল / টেলিফোন বিল এর যেকোনো একটির ফটোকপি। তবে বিলটি হতে হবে সাম্প্রতিক সময়ে জমা করা কোনো বিলের কপি। বিলটি যদি আপনার বাবার নামে হয়ে থাকে তাতেও কোনো সমস্যা নেই।

যদি আপনি একজন প্রিপেইড মিটার ইউজার হোন তবে আপনার প্রিপেইড কার্ডের উভয় পাশের ফটোকপি দিতে পারেন বা প্রিপেইড কার্ড করার সময় আপনি নিশ্চই কোনো স্লিপ পেয়ে থাকেন, সেই স্লিপের ফটোকপি দিতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন যেন এটিতে আপনার এড্রেস দেয়া থাকে।

Advertisement

৫. বিগত ৬ মাসের Bank Statement

আপনার Bank Statement সংগ্রহ করতে হবে অথবা ১৫০ ডলার এনডোর্স করে এনডোর্সমেন্টের কোনো ডকুমেন্ট সংগ্রহ করতে হবে। যে ব্যাংক একাউন্টের স্টেটম্যান্ট দিচ্ছেন, সে একাউন্টে রেগুলার লেনদেন থাকতে হবে।

এমন হলে হবে না যে আপনি আগে এই একাউন্টে লেনদেন করেন নি, কিন্তু এখন জমা দেয়ার জন্য Statement নিয়ে এসেছেন।

Bank Statement খুবই গুরুত্বপূর্ণ হবে আপনার ভিসা দেয়ার ক্ষেত্রে। এম্বাসি আপনার এবিলিটি বুঝতে পারবে এই স্টেটম্যান্ট দিয়ে। আর স্টেটম্যান্ট দেয়ার সময় আপনার একাউন্টে মিনিমাম ২০ হাজার টাকার কাছাকাছি থাকতে হবে।

৬. জমির খতিয়ান/ NOC/ ট্রেড লাইসেন্স/ Student ID-র কপি

  • আপনি যদি পেশায় একজন কৃষক হোন, তবে আপনার দরকার হবে জমির ক্ষতিয়ানের একটি ফটোকপি।
  • সরকারী চাকরিজীবী হলে আপনার দরকার হবে NOC এর ফটোকপি।
  • ব্যবসায়ি হলে দরকার হবে আপনার ট্রেড লাইসেন্স এর ফটোকপি।
  • ছাত্র হলে আপনার দরকার হবে স্টুডেন্ট আইডি এর ফটোকপি।
  • গৃহিণী হলে দরকার হবে স্বামি যে প্রফেশনে আছেন সেই প্রফেশনের ডকুমেন্ট।
  • ফ্রিলেন্সার হলে মার্কেটপ্লেসে থাকা আপনার একাউন্টের স্ক্রিনশর্ট দিন, সাথে আর্নিং এর স্টেটমেন্টও।
  • বেকার হলে যার উপর নির্ভর তার ডকুমেন্ট।
  • অবসর প্রাপ্ত হলে অবসরের কাগজপত্রের ফটোকপি।

৭. পাসপোর্টের কপি

আপনার মেইন পাসপোর্ট, যেটি বর্তমানে ভ্যালিড, সেটির একটি ফটোকপি করে নিতে হবে। আর অবশ্যই পাসপোর্টের মেয়াদ কমপক্ষে ৬ মাস বিদ্যমান থাকতে হবে।

৮. পূর্বে ভারতে গিয়ে থাকলে সেই ভিসার কপি

আপনি যদি পূর্বে ভারতে গিয়ে থাকেন তবে সেই ভিসার একটি ফটোকপি দরকার হবে।

৯. করোনার টিকা সনদ

আপনার অন্তত দুটি ভ্যাকসিন দেয়া আছে এমন হলে আপনি নিশ্চই একটি করোনা টিকার সনদ পেয়েছেন। সেই সনদের একটি ফটোকপি দিতে পারেন।

১০. মেইন পাসপোর্ট

আপনার যে পাসপোর্টটি বর্তমানে ভেলিড, সেটি সাথে রাখতে হবে। এটির মেয়াদ অন্তত ছয় মাস থাকতে হবে এবং এর মধ্যে অন্তত দুটি খালি পেইজ থাকতে হবে।

১১. ওল্ড পাসপোর্ট

যদি আপনার পূর্বের কোনো পাসপোর্ট থেকে থাকে, তবে সেগুলোও দরকার হবে। সুতরাং সেগুলোও সাথে রাখতে হবে।

১২. প্রয়োজনে জিডির কপি

যদি এমন হয় যে আপনি আপনার পুরোনো পাসপোর্টটি খুজে পাচ্ছেন না বা তা হারিয়ে গেছে, তবে যে এরিয়াতে হারানোর সম্ভাবনা আছে সেই এরিয়াতে নিকটস্থ থানায় গিয়ে একটি জিডি করুন। তারপর সেই জিডির একটি ফটোকপি করে নিন।

শেষকথা

এই ছিল, ইন্ডিয়ান টুরিস্ট ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের তালিকা। ভিসার জন্য আবেদন করতে যাওয়ার আগেই সকল ডকুমেন্টস গুলো একত্র করে ফেলাই উত্তম। কেননা এই ডকুমেন্টস গুলো আপনার আবেদন করার সময় দরকার হবে।

আর সকল ডকুমেন্টস আপনার কাছে না থাকলে এটি আপনার ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরী করবে। তাই আপনার এব্যাপারে সচেতন থাকাই ভালো।

ইন্ডিয়ান ভিসার আবেদন নিয়ে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর

আপনার ইন্ডিয়ান ভিসা এপ্লিকেশন এবং অন্যান্য সকল ডকুমেন্টস, যা এই পোস্টে আলোচনা করা হয়েছে, যেমন: জাতীয় পরিচয় পত্র, ছবি, পাসপোর্ট, স্টেটম্যান্ট, ইউটিলিটি বিলের কপি, ইত্যাদি। এগুলো সব একত্রে পিন আপ করে সেখানে জমা দিবেন।

না, বিগত ৬ মাসে লেনদেন হয়নি এমন ব্যাংকের স্টেটম্যান্ট দেয়া যাবে না। কেননা স্টেটম্যান্ট আপনার ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারা আপনার এভিলিটি বুঝতে পারে আপনার ব্যাংক স্টেটম্যান্ট দেখার মাধ্যমে। তাই লেনদেন হয় আপনার এমন ব্যাংকের ব্যাংক একাউন্ট দিন। আর হ্যাঁ, উক্ত একাউন্টে কিন্তু নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ অবশিষ্ট থাকতে হবে যখন আপনি এই স্টেটম্যান্টি নিচ্ছেন।

ইন্ডিয়ান টুরিস্ট ভিসার জন্য এপ্লাই করতে যদি ডলার এনডোর্স করেন, তবে আপনাকে ১৫০ ডলার এনডোর্স করতে হবে।

এটি আসলে কেউ বলতে পারবে না। আপনার ডকুমেন্টস সব ঠিক থাকার পরও যদি ভিসা দাতার কাছে আপনার কোনো বিষয় সন্দেহের মনে হয়, তবে তিনি আবেদন বাতিল করেও দিতে পারেন। এটি আসলে সম্পন্ন তাদের উপর নির্ভর। তবে আপনার ডকুমেন্টস সব ঠিক থাকলে ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

সাধারণত ৩ থেকে ৭ দিনের মধ্যেই ইন্ডিয়ান টুরিস্ট ভিসা পাওয়া যায়।

বাংলাদেশী পাসপোর্টধারীদের জন্য ইন্ডিয়ান ভিসার জন্য কোন ভিসা ফি নেই। তবে ভিসা প্রসেসিং ফি বাবদ ৯০০ টাকা ফি পরিশোধ করতে হয়।

Advertisement

Similar Posts

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।