ফিজি কাজের ভিসা ২০২৪: ফিজি যেতে কত টাকা লাগে
ফিজিতে কাজের ভিসায় যেতে চান? তাহলে জেনে নিন ফিজিতে কোন কাজের চাহিদা বেশি, ভিসা আবেদন করতে কি কি লাগবে এবং ফিজি যেতে কত টাকা লাগে।
ফিজি হলো একটি দ্বীপ রাষ্ট্র যা প্রায় ৩০০ টি দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত। ফিজিতে অনেক বাংলাদেশী শ্রমিক কাজের উদ্দেশ্যে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় কাজ করতে যায়।
ফিজিতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের কাজের চাহিদা অনেক বেশি এবং ভালো বেতন ও সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়।
চলুন জেনে নেয়া যাক ফিজি কাজের ভিসা কিভাবে পাওয়া যায়, কত খরচ হয়, বেতন কত, কোন কোন কাজের চাহিদা বেশি ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু তথ্য।
ফিজি কাজের ভিসা
ফিজিতে বিভিন্ন কাজের ভিসায় যাওয়া যায় এবং বর্তমানে অনেক বাংলাদেশি শ্রমিক ফিজিতে কাজ করছে। ফিজিতে প্রধান কাজ হল জেলে বা মাছ ধরা কিন্তু এছাড়াও ইলেকট্রিশিয়ান, কৃষি, গার্মেন্টস, মেকানিক্যাল, ওয়েল্ডার, কনস্ট্রাকশন ইত্যাদি কাজের চাহিদা রয়েছে। তাই এসব কাজের ভিসা সহজে পাওয়া যায়।
ফিজিতে ২ ধরনের কাজের ভিসা পাওয়া যায় যার একটি হলো ১ বছর বা স্বল্প মেয়াদী কাজের ভিসা এবং অন্যটি হলো ৩ বছর বা দীর্ঘ মেয়াদি কাজের ভিসা।
আপনি যেকোনো একটি কাজের ভিসা সিলেক্ট করে বাংলাদেশ থেকে ফিজিতে কাজের উদ্দেশ্যে যেতে পারবেন। আরও পড়ুন- সরকারিভাবে কোন কোন দেশে যাওয়া যায়।
বাংলাদেশ থেকে ফিজিতে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় যাওয়ার জন্য অবশ্যই আপনাকে ফিজির কনস্যুলেট থেকে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। বাংলাদেশ থেকে সহজেই ফিজি ওয়ার্ক ভিসা পাওয়া সম্ভব।
আরও পড়ুন:
- কানাডা জব ভিসা: ভিসা খরচ ও আবেদনের নিয়ম
- জাপান ওয়ার্ক পারমিট ভিসা
- লিথুনিয়া কাজের ভিসা
- মাল্টা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা
ফিজি কাজের ভিসার জন্য কি কি লাগবে
ফিজিতে কাজের ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট পাওয়ার জন্য পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, বিভিন্ন সার্টিফিকেট, মেডিকেল রিপোর্ট ইত্যাদি কাগজপত্র আবেদন ফরমের সাথে জমা দিতে হয়।
ফিজিতে কাজের ভিসায় যাওয়ার জন্য যে সকল প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট লাগবে তা হলো-
- কমপক্ষে ৬ মাস মেয়াদী বৈধ পাসপোর্ট;
- এনআইডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি;
- এডুকেশনাল এবং কাজের দক্ষতার সার্টিফিকেট;
- নিয়োগকর্তার পাঠানো কাজের আমন্ত্রণপত্র;
- ফিজি ওয়ার্ক পারমিট;
- ফিজি ভিসার আবেদন ফরম;
- আবেদনকারীর হেলথ ইন্সুরেন্স এবং মেডিকেল রিপোর্ট;
- ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি;
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট এর কপি;
উপরোক্ত প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসগুলো ফিজি এম্বাসিতে আবেদন ফরম জমা দেওয়ার সময় একত্রে জমা দিতে হবে এবং অবশ্যই তথ্যগুলো নির্ভুল হতে হবে।
ফিজি ওয়ার্ক ভিসা আবেদন করার নিয়ম
বাংলাদেশ থেকে ফিজিতে কাজের ভিসায় যাওয়ার জন্য আপনাকে প্রথমেই আপনাকে ওয়ার্ক পারমিট সংগ্রহ করতে হবে, ফিজির নিকটস্থ কনস্যুলেটে যোগাযোগ করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ আবেদন ফরম জমা দিয়ে ভিসা প্রসেসিং এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
চলুন ধাপে ধাপে জেনে নেয়া যাক কিভাবে ফিজি কাজের ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।
ধাপ ১- ওয়ার্ক পারমিট সংগ্রহ করুন
ফিজিতে কাজের ভিসার মাধ্যমে যাওয়ার জন্য আপনাকে সর্বপ্রথম ওয়ার্ক পারমিট এর জন্য আবেদন করতে হবে এবং সঠিকভাবে আবেদন করে ওয়ার্ক পারমিট সংগ্রহ করতে হবে।
এই ওয়ার্কপারমিট হলো বিদেশে কাজের উদ্দেশ্যে যাওয়ার অনুমতিপত্র যা আবেদন করার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশ থেকে বিদেশগামী কর্মীকে প্রদান করা হয়।
ধাপ ২ – ফিজির নিকটস্থ কনস্যুলেটে যোগাযোগ করুন
বাংলাদেশ থেকে কাজের উদ্দেশ্যে ফিজিতে যাওয়ার জন্য প্রথমেই ফিজির নিকটস্থ কনস্যুলেটে যোগাযোগ করতে হবে।
অনলাইনে ফিজির এম্বাসির ওয়েবসাইটে অথবা আপনার নিকটতম কনস্যুলেটে কাজের ভিসার আবেদন করার জন্য যোগাযোগ করতে হবে এবং ভিসা করার সব নিয়ম কানুন জেনে নিয়ে আবেদন ফরম সংগ্রহ করতে হবে।
আরও পড়ুন:
- ইতালি ভিসা খরচ ও আবেদন করার নিয়ম
- অস্ট্রেলিয়া কাজের ভিসা
- মালয়েশিয়া ফ্যাক্টরি ভিসার দাম
- জানুন সিঙ্গাপুরে কোন কাজের চাহিদা বেশি ও বেতন কত
ধাপ ৩ – আবেদন ফরম পূরণ করুন
ফিজির কনস্যুলেট থেকে আবেদন ফরম সংগ্রহ করার পর আপনার সকল প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে তা পূরণ করতে হবে।
ফিজি কাজের ভিসার আবেদন ফরম তাদের অনলাইন ওয়েবসাইট থেকে পূরণ করা যাবে এবং অবশ্যই সকল তথ্য সঠিক এবং নির্ভুল হতে হবে।
ধাপ ৪ – প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমা দিন
আবেদন ফরম পূরণ করার পর এম্বাসী থেকে নির্ধারিত সকল প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস একত্রে আবেদন ফরমের সাথে জমা দিতে হবে।
আবেদনকারীর বৈধ পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ওয়ার্ক পারমিট, মেডিকেল রিপোর্ট, কাজের দক্ষতার সার্টিফিকেট ইত্যাদি সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে এবং কোন ডকুমেন্টস যাতে বাদ না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
ধাপ ৫ – অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করুন
আবেদন ফরমের সাথে সকল প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস জমা দেয়ার পর ভিসার সকল খরচ দিয়ে দিলেই আপনার ভিসার প্রসেসিং শুরু হবে এবং আপনাকে ভিসার অনুমোদন পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
কোন ধরনের জটিলতা না থাকলে সাধারণত ফিজির এম্বাসি থেকে কাজের ভিসা প্রসেসিং হতে ৭ থেকে ১০ দিন বা সর্বোচ্চ ১৫ দিন সময় লাগে এবং ভিসা অনুমোদন পাওয়ার পর তা আবেদনকারীকে সংগ্রহ করার জন্য মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়।
এভাবে উপরোক্ত ধাপগুলো সঠিকভাবে অনুসরণ করলে কোনরকম জটিলতা ছাড়াই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফিজি কাজের ভিসা পাওয়া সম্ভব।
ফিজি কাজের ভিসার খরচ
ফিজির অফিশিয়াল এম্বাসির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে কাজের ভিসায় যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রায় ৫ লক্ষ টাকা থেকে ৬ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়ে থাকে।
আবার কোন এম্বাসি বা দালাল ছাড়াই আপনি নিজে নিজে ভিসার সকল প্রসেস সম্পন্ন করতে পারলে আপনার প্রায় ২ লক্ষ টাকা থেকে ৪ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে।
ফিজি কাজের ভিসার মোট খরচের মধ্যেই আপনার প্লেনের টিকিট, যাতায়াতের খরচ, খাওয়া-দাওয়া সহ ফিজিতে যাওয়া পর্যন্ত অন্যান্য সকল ধরনের খরচ অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
তবে বিভিন্ন এম্বাসি বা বিভিন্ন ধরনের এজেন্সি ভেদে ফিজি কাজের ভিসার খরচ কম বেশি হতে পারে।
তবে সতর্কতার জন্য কোন দালাল বা এজেন্সির মাধ্যমে ভিসার আবেদন না করে ফিজির অফিসিয়াল এম্বাসি থেকে কাজের ভিসার আবেদন করাই শ্রেয়।
ফিজিতে কোন কাজের চাহিদা বেশি
ফিজিতে অনেক ধরনের কাজের সুযোগ থাকলেও লেবার, ওয়েল্ডার, কার্পেন্টার, গার্মেন্টস, কৃষি, ইলেকট্রনিক্স, ড্রাইভিং, ক্লিনার ইত্যাদি কাজের চাহিদা অনেক বেশি।
প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে অনেক শ্রমিক ফিজিতে কাজের উদ্দেশ্যে যায় এবং বর্তমানে প্রায় ৫ হাজার এর মতো দক্ষ বাংলাদেশি শ্রমিক ফিজিতে কাজ করছে।
ফিজিতে যেসব কাজের চাহিদা বেশি সেগুলো হলো:
- ওয়েল্ডিং;
- কৃষি;
- গার্মেন্টস;
- ইলেকট্রনিক্স;
- মেকানিক্যাল;
- কনস্ট্রাকশন;
- ক্লিনিং;
- পেইন্টিং;
- হোটেল বয়;
- ড্রাইভিং ইত্যাদি।
উপরোক্ত কাজগুলো চাহিদা ফিজিতে অনেক বেশি এবং বাংলাদেশ থেকে অধিকাংশ শ্রমিক এ সকল কাজ করার জন্যই ফিজিতে যেয়ে থাকে।
ফিজি কাজের বেতন কত?
ফিজিতে সর্বনিম্ন বেতন ঘন্টা প্রতি ৪ ফিজিয়ান ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে জানুয়ারী ২০২২ থেকে। সুতরাং মাসে নুন্যতম ৮০০ থেকে ১০০০ ফিজিয়ান ডলার আয় করা সম্ভব যা বাংলাদেশি টাকায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা প্রায়।
ফিজিতে বিভিন্ন কাজে কর্মরত কর্মীরা প্রতি মাসে প্রায় ৩০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৪০/৪৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন পেয়ে থাকে।
কাজের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে ফিজিতে শ্রমিকদের বেতন কম বেশি হয়ে থাকে।
ফিজিতে সর্বনিম্ন বেতন একজন গার্মেন্টস কর্মী এবং ক্লিনারের যা ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা, শ্রমিক, কনস্ট্রাকশন, কৃষি, ড্রাইভিং ইত্যাদির ক্ষেত্রে বেতন ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা, মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিশিয়ান ইত্যাদি কাজের বেতন প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
তবে বিভিন্ন পেশার উপর নির্ভর করে কাজের মান এবং দক্ষতা যত বৃদ্ধি পাবে কর্মীদের কাজের বেতনও তত বৃদ্ধি পাবে।
ফিজি কাজের ভিসা সম্পর্কিত সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর
বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে ওয়ার্ক ভিসায় ফিজি যেতে প্রায় ৫ লক্ষ টাকা থেকে ৬ লক্ষ টাকা বা সর্বোচ্চ ৭ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়ে থাকে।
আপনার কাগজপত্রে কোন রকম জটিলতা না থাকলে প্রায় ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে অথবা সর্বোচ্চ ১৫ দিনের মধ্যে ভিসা প্রসেসিং হয়ে যায়। তবে অনেক সময় ফিজি কাজের ভিসা প্রসেসিং এর জন্য ১ মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
ফিজিতে সর্বনিম্ন বেতন ঘন্টা প্রতি ৪ ফিজিয়ান ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২২ সাল থেকে। পেশার উপর ভিত্তি করে ফিজিতে একজন শ্রমিকের কাজের বেতন প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে একজন দক্ষ শ্রমিকের বেতন প্রায় ৪০ থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
ফিজিতে ব্যবহারকৃত মুদ্রা হলো ফিজিয়ান ডলার যার ১ ডলার হলো বাংলাদেশী টাকায় ৪১ টাকার সমান।
হ্যাঁ, ফিজিতে কাজের ভিসায় যাওয়ার জন্য ভিসা আবেদনের পূর্বে অবশ্যই আপনাকে ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করে ওয়ার্ক পারমিট সংগ্রহ করতে হবে।
শেষকথা
যেকোন দেশেই কাজের ভিসায় যাওয়ার ক্ষেত্রে মধ্যস্ততাকারী দালাল থেকে অবশ্যই দূরে থাকবেন। তাছাড়া ফিজিতে কাজের ভিসার আবেদনের আগেও সকল বিষয় ভালভাবে জেনে শুনে বুঝে করা উচিত। ফিজেতে ওয়ার্ক ভিসায় যাওয়ার আগে আপনার যেসব বিষয় জানা উচিত, তা জানতে দেখুন- ফিজি সম্পর্কে কিছু তথ্য।
কাজের ভিসা সংক্রান্ত আরও তথ্য
লিথুনিয়া | লিথুনিয়া ওয়ার্ক পারমিট ভিসা |
ইতালি | ইতালি স্পন্সর ভিসা |
কানাডা | কানাডা জব ভিসা |
মাল্টা | মাল্টা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা |
অস্ট্রেলিয়া | অস্ট্রেলিয়া কাজের ভিসা |
সিঙ্গাপুর | সিঙ্গাপুর কাজের ভিসা |