ADVERTISEMENT
ADVERTISEMENT
সঞ্চয়পত্রের নতুন নিয়ম অনুযায়ী একজন ব্যক্তি সব ধরনের সঞ্চয়পত্র মিলিয়ে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারবেন। এছাড়া মোট ৫ লক্ষ টাকার বেশি অংকের সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে প্রয়োজন হবে বিগত আয়বর্ষের আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ।
সঞ্চয়পত্র কি, কত প্রকার এবং বিভিন্ন ধরণের সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ও নতুন নিয়মকানুন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। আশা করি আপনাদের অনেক কাজে লাগবে।
ADVERTISEMENT
সঞ্চয়পত্র কি
জাতীয় সঞ্চয়পত্র হচ্ছে জনসাধারণের হাতে থাকা সঞ্চিত অলস অর্থ জাতীয়ভাবে সংগ্রহ করে দেশের বিনিয়োগ ও বাজেট ঘাটতি মেটানোর একটি মাধ্যম। জনগন সঞ্চয়পত্র ক্রয় করার মাধ্যমে তার সঞ্চিত অর্থ সরকারের কাছে জমা রাখে। এর বিনিময়ে সঞ্চয়পত্র ক্রেতা একটি নির্দিষ্ট হারে সুদ/মুনাফা পায়। অপরদিকে, সরকার বিদেশ থেকে ঋণ গ্রহণ না করে এই অর্থ দেশের উন্নয়ন ও বাজেটের ব্যয় মেটাতে পারে।
বাংলাদেশ জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের অধীনে সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে জনসাধারণের কাছে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে থাকা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় সংগ্রহ করা এবং তাদেরকে একটি ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। আরও পড়ুন- সঞ্চয়পত্র কোন কোন ব্যাংক থেকে ক্রয় করা যায়
ADVERTISEMENT
সঞ্চয়পত্র কত প্রকার কি কি?
বাংলাদেশে মোট ৪ ধরণের সঞ্চয়পত্র চালু রয়েছে। এগুলো হলো;
- ৫ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র
- তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র
- পরিবার সঞ্চয়পত্র
- পেনশনার সঞ্চয়পত্র
৫ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র
সকল শ্রেণি ও পেশার বাংলাদেশী নাগরিক, এবং আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর ৬ষ্ঠ তফসিল অনুচ্ছে ৩৪ অনুযায়ী কোন প্রতিষ্ঠান ৫ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে পারবেন।
৫ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র একক নামে সর্বোচ্চ ৩০ লক্ষ টাকা এবং যুগ্ম নামে ৬০ লক্ষ টাকা ক্রয় করা যাবে। আবার প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এর কোন উর্দ্ধসীমা নেই।
ADVERTISEMENT
পরিবার সঞ্চয়পত্র
পরিবার সঞ্চয়পত্র হচ্ছে সাধারন মহিলা, শারীরিক প্রতিবন্ধী মহিলা বা পুরুষ, এবং আয় করতে অক্ষম ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়স্ক কোন নাগরিকের জন্য সঞ্চয়পত্র। অর্থাৎ পরিবার সঞ্চয়পত্র শুধু মহিলা নয় পুরুষ ও ক্রয় করতে পারবে তবে এজন্য তাকে ৬৫ বা তার বেশি বয়সের হতে হবে।
পরিবার সঞ্চয়পত্র নিয়ে আরো বিস্তারিত জানতে পড়ুন- পরিবার সঞ্চয়পত্রের নতুন নিয়ম।
তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র
সকল শ্রেণি-পেশার নাগরিক এবং সমাজসেবা কার্যালয় কর্তৃক প্রত্যয়নকৃত সকল অটিস্টিকদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান/ অন্য যে কোন অটিস্টিক সহযোগী প্রতিষ্ঠান ৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে পারবেন।
ADVERTISEMENT
যে কোন একজন সুস্থ মস্তিকের প্রাপ্ত বয়স্ক অথবা নাবালক ব্যক্তি একক বা যৌথভাবে ৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে পারবেন। তবে নাবালকের ক্ষেত্রে অবশ্যই ১ জন প্রাপ্ত বয়স ব্যক্তি নাবালকের পক্ষে সঞ্চয়পত্র ক্রয় করবেন।
৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র নিয়ে বিস্তারিত জানতে পড়ুন- তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র।
পেনশনার সঞ্চয়পত্র
পেনশনার সঞ্চয়পত্র হচ্ছে মূলত পেনশন বা অবসর ভাতাভোগী নাগরিকদের জন্য। যারা এ সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে পারেন তারা হলেন;
- অবসরপ্রাপ্ত সরকারী, আধা-সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা/কর্মচারী
- সুপ্রীম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত মাননীয় বিচারপতিগণ, সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য
- মৃত চাকুরিজীবীর পারিবারিক পেনশন সুবিধাভোগী স্বামী/স্ত্রী/সন্তান।
যেখান থেকে সঞ্চয়পত্র করা যায়
৪ জায়গা থেকে আপনি সঞ্চয়পত্র করতে পারবেন। যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে সঞ্চয়পত্র ক্রয় করা যাবে তা হচ্ছে:
- জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের অধীনস্থ সকল সঞ্চয় ব্যুরো অফিস
- তালিকাভুক্ত ব্যাংকসমূহ (শরীয়াহ ভিত্তিক ব্যাংক বাদে)
- ডাকঘরসমূহ
- বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যালয়সমূহ (সদরঘাট ও ময়মনসিংহ অফিস বাদে)
এসব কোন প্রতিষ্ঠান থেকে কিভাবে সঞ্চয়পত্র করবেন তার বিস্তারিত দেখুন- সঞ্চয়পত্র কোন কোন ব্যাংকে করা যায়। ইসলামী ব্যাংক ছাড়া অন্য সব তালিকাভুক্ত ব্যাংক থেকেই সঞ্চয়পত্র ক্রয় করা যাবে। তবে আমার মতে সবচেয়ে ভাল হবে আপনার নিকটস্থ সোনালী ব্যাংক থেকে সঞ্চয়পত্র ক্রয় করা।
সঞ্চয়পত্র কিনতে কি কি লাগে
- ক্রেতার ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- নমিনির প্রত্যেকের ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি (ক্রেতা কর্তৃক সত্যায়িত)
- আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
- ক্রেতার ব্যাংক হিসাবের MICR চেক এবং MICR সাদা চেকের কপি।
সঞ্চয়পত্র ভাঙ্গানোর নিয়ম
সঞ্চয়পত্র ভাঙ্গানোর জন্য এখন আর কোন আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে হয় না। মেয়াদ শেষে অটোমেটিকেলি আপনার ব্যাংক একাউন্টে মুনাফা সহ সঞ্চয়পত্রের মোট টাকা জমা হয়ে যাবে।
তবে মেয়াদ পূর্তির পূর্বে সঞ্চয়পত্র ভাঙ্গানোর জন্য আপনাকে লিখিত আবেদন করতে হবে। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে কিভাবে সঞ্চয়পত্র ভাঙ্গাবেন তার বিস্তারিত জানতে দেখুন মেয়াদ পূর্তির পূর্বে সঞ্চয়পত্র ভাঙ্গানোর নিয়ম।
সঞ্চয়পত্র আয়কর রিটার্ন
সঞ্চয়পত্র আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার জন্য রিটার্ন ফরমের ২ নং (Income and Tax) অংশে Interest on Securities হিসেবে সংশ্লিষ্ট আয় বছরে প্রাপ্ত সঞ্চয়পত্রের মোট সুদের পরিমাণ লিখুন। আপনার TIN Certificate থাকলে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার উপর ১০% হারে উৎসে কর কর্তন করা হয়। সেই করকে অগ্রিম কর হিসেবে দেখিয়ে সঞ্চয়পত্র আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে।
আয়কর রিটার্ন দাখিল করলেই আপনাকে কোন কর দিতে হবে তা নয়। সঞ্চয়পত্রের মুনাফার উপর কর আপনার থেকেই আগেই কেটে নেয়া হয়েছে। রিটার্নে শুধুমাত্র কত টাকা অগ্রিম কর কর্তন করা হয়েছে তার পরিমাণ উল্লেখ করবেন।
যদি আপনার অন্য কোন করযোগ্য আয় থাকে সেক্ষেত্রে আপনার মোট প্রদেয় আয়কর থেকে সঞ্চয়পত্রের অগ্রিম আয়কর বাদ দিয়ে বাকি কর পরিশোধ করতে হবে।
উল্লেখ্য, নতুন অর্থ আইন ২০২২ অনুসারে একজন ব্যাক্তি ৫ লক্ষ টাকার বেশি পরিমাণ সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে হলে, তাকে বিগত করবর্ষের আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার প্রমাণ দেখাতে হবে।
তবে ৫ লক্ষ টাকার কম সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে টিন সার্টিফিকেট বা আয়কর রিটার্নের কোন কাগজপত্র দেখাতে হবে না। আপনি ৫ লক্ষ টাকার বেশি বিনিয়োগ না করলেও যদি আপনার টিন সার্টিফিকেট থাকে অবশ্যই আয়কর রিটার্ন দাখিল করুন।
সঞ্চয়পত্র নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন ও উত্তর
৫ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে সর্বনিম্ন ১০ টাকার সঞ্চয়পত্র কেনা যায়। পাঁচ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র প্রবর্তন হয়েছিল ১৯৭৭ সালে।
সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে কিছু কিছু জায়গায় এটিকে মুনাফা বলা হয় আবার বাজেটে এটিকে সঞ্চয়পত্রের সুদ বলা হয়। আয়কর আইনেও একে সঞ্চয়পত্রের সুদ বলা হয়। যাই বলা হোক না কেন, এটি সম্পূর্ণভাবে সুদ তাই সঞ্চয়পত্রের সুদ হারাম। সরকার অন্য উৎস থেকে ঋণ না নিয়ে সঞ্চয়পত্রের টাকা থেকে দেশের ব্যয় নির্বাহ করে এবং উচ্চ সুদে জনগনকে তা ফেরত দেয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সকল অফিস, ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক ব্যতীত সকল তালিকাভুক্ত ব্যাংক, জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সকল সঞ্চয় ব্যুরো অফিস এবং পোস্ট অফিসে সঞ্চয়পত্র পাওয়া যায়।
মোট ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ৫ বছরান্তে পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফা ১১.৫২%, ৪ বছরান্তে ১১%, ৩ বছরান্তে ১০.৫০%, ২ বছরান্তে ১০% এবং ১ বছরান্তে ৯.৫০%। তবে ১৫ লক্ষেরে বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার হার কিছুটা কমে আসবে। দেখুন পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফা কত?
না। আপাতত জাতীয় সঞ্চয়স্কীম অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে নাবালক বা নাবালকের পক্ষে কোন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির সঞ্চয়পত্র কেনার সুযোগ নেই।
সঞ্চয়পত্র হারিয়ে গেলে নিকটস্থ থানায় জিডি করে প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে ডুপ্লিকেট সঞ্চয়পত্র পাওয়া যাবে।
হ্যা, ৩/২/২০১৯ তারিখের পূর্বে ক্রয়কৃত সঞ্চয়পত্র ইস্যু অফিসের শাখাসমূহে স্থানান্তর করা যায়।
না, সঞ্চয়পত্র জামানত রেখে ব্যাংক ঋণ নেয়া যায় না।
অনলাইনে আপনি সরাসরি সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে পারবেন না। অনলাইনে সঞ্চয়পত্র ক্রয় করার জন্য ক্রেতার এনআইডি কার্ডের ফটোকপি, MICR চেকের মূলকপি ও ফটোকপি, ক্রেতা ও নমিনির ১ কপি ছবি এবং নমিনির জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে ব্যাংকে যোগাযোগ করুন।
ADVERTISEMENT