বাংলাদেশে পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে এবং কত টাকা লাগে

কোন দালালের সহযোগিতা ছাড়াই অতিরিক্ত টাকা খরচ না করে নিজেই নিজের পাসপোর্ট করতে পারবেন। জানুন পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।

পাসপোর্ট করার নিয়ম খুবই সহজ একটি প্রক্রিয়া। ই পাসপোার্ট করতে জন্য খুব বেশি কাগজপত্রের দরকার হয় না এবং কোন কাগজপত্র সত্যায়িত করানোর প্রয়োজনও হয় না।

আসুন জানি পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে এবং কত টাকা লাগে

পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে

বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের নিয়ম অনুসারে, পাসপোর্ট করতে জাতীয় পরিচয় পত্র অথবা জন্ম নিবন্ধন, নাগরিক সনদ ও পেশার প্রমাণপত্র লাগে। এছাড়া অপ্রাপ্তবয়স্কদের পাসপোর্ট করতে পিতা ও মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র এবং সরকারি চাকরীজীবিদের ক্ষেত্রে NOC অথবা GO লাগবে।

Advertisement

পাসপোর্ট করতে আপনার যেসব কাগজ লাগে তা হলো:

1. অনলাইনে আবেদনের Application Summery;
2. অনলাইন আবেদনের Registration Form;
3. জাতীয় পরিচয়পত্রের মূলকপি ও ফটোকপি (বয়স ২০ এর বেশি);
4. ইংরেজি জন্ম নিবন্ধন সনদের মূল কপি ও ফটোকপি (বয়স ২০ এর কম);
5. পাসপোর্ট ফি পরিশোধের A Challan;
6. NOC অথবা GO (সরকারি চাকরীজীবিদের জন্য)
7. নাগরিক সনদের (নতুন পাসপোর্টের জন্য);
8. পিতা ও মাতার জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি (শিশুদের ক্ষেত্রে আবশ্যিক)।

তাছাড়া পাসপোর্ট আবেদন করতে বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে নিম্মোক্ত অতিরিক্ত কাগজপত্র প্রয়োজন হয়:

• পূর্ববর্তী পাসপোর্টের ফটোকপি ও অরিজিনাল পাসপোর্ট (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে);
• পেশাগত সনদের ফটোকপি বা চাকুরীর আইডি কার্ড (পেশাজীবির ক্ষেত্রে- যেমন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, হিসাবরক্ষক, আইনজীবি);
• নাগরিক সনদ/ চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে);
• ঠিকানার প্রমাণপত্র/ ইউটিলিটি বিলের কপি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে);
• 3R Size ছবি Lab Print, Gray Background (৬ বছর বয়সের কম শিশুদের ক্ষেত্রে);
• পাসপোর্ট হারানোর জিডি কপি (পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে)।

এই অতিরিক্ত ডকুমেন্টগুলো সবার জন্য সবসময় প্রয়োজন হয় না। যেমন আপনি পাসপোর্ট রিনিউ করার ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী পাসপোর্টের অরিজিনাল কপি দেখাতে হয় এবং একটি ফটোকপি জমা দিতে হয়।

আরও পড়তে পারেন

• ই পাসপোর্ট আবেদন করার নিয়ম
• পাসপোর্ট রিনিউ করার নিয়ম
• ই পাসপোর্ট চেক করার নিয়ম

এখন এই Documents গুলো নিয়ে একটু বিস্তারিত জানা যাক।

১. Application Summery ও Registration Form

অনলাইনে আবেদন সম্পন্ন করার পর আপনি ২টি ডকুমেন্ট Download করতে পারবেন, একটি Application Summery এবং অন্যটি Registration Form। Application Summery টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি বাধ্যতামূলকভাবে জমা দিতে হয়। Registration ফরমটি ২ পাতার এখানে আপনার সকল ব্যক্তিগত তথ্য, ঠিকানা, জরুরী যোগাযোগের ঠিকানা তথ্যসহ প্রিন্ট হবে।

এই ২টি ডকুমেন্ট প্রিন্ট করে অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ জমা দিতে হবে।

২. জাতীয় পরিচয় পত্র অথবা জন্ম নিবন্ধন সনদ

যাদের বয়স ২০ বছর বা তার বেশি তাদের পাসপোর্ট করতে অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র প্রয়োজন হবে। আবার যাদের বয়স ১৮ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে তারা চাইলে জাতীয় পরিচয় পত্র অথবা জন্ম নিবন্ধন যে কোন ১টি ডকুমেন্ট দিয়ে পাসপোর্ট করতে পারবেন। তবে বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশন হতে আবেদনের ক্ষেত্রে Online Birth Certificate English Version গ্রহণযোগ্য হবে।

তবে মনে রাখবেন Birth Certificate বা NID Card যেটা দিয়েই পাসপোর্ট করেন সেটার তথ্য অনুসারেই পাসপোর্ট আবেদন করতে হবে। এমনকি যারা পাসপোর্ট রিনিউ করবেন তাদের জন্যও পাসপোর্টের তথ্য জাতীয় পরিচয় পত্র অথবা জন্ম নিবন্ধনের সাথে মিল থাকতে হবে।

জাতীয় পরিচয় পত্র বা জন্ম নিবন্ধনের তথ্য পাসপোর্টের সাথে না মিললে পাসপোর্ট রিনিউ করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে হয়তো আপনাকে পাসপোর্ট সংশোধন অথবা পাসপোর্ট অনুসারে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন বা জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করে নিতে হবে।

পাসপোর্টের আবেদন জমা দেয়ার সময় অবশ্যই এগুলোর মূল কপি সংগে নিয়ে যাবেন এবং ১কপি ফটো কপি আবেদনের সাথে নিয়ে যাবেন।

৩. পাসপোর্ট ফি পরিশোধের চালান

পাসপোর্ট ফি পরিশোধ করতে হয় বাংলাদেশ সরকারের Automated Challan (A Challan) এর মাধ্যমে। যে কোন ব্যাংক থেকেই পাসপোর্ট ফি জমা দিতে পারবেন। তাছাড়া আপনি চাইলে Online Banking বা Mobile Wallet এর মাধ্যমে অনলাইনে পাসপোর্ট ফি জমা দিতে পারবেন।

৪. অন্যান্য কাগজপত্র (প্রযোজ্য হলে)

পাসপোর্ট করার জন্য উপরের ৩টি মূল কাগজপত্র ছাড়াও অন্যান্য কিছু কাগজপত্র প্রয়োজন হতে পারে, যেগুলো সবার জন্য প্রযোজ্য নাও হতে পারে। আপনার তথ্য ও আবেদন অনুসারে, পূর্ববর্তী পাসপোর্টের ফটোকিপি, নাগরিক সনদ, পিতা-মাতার এনআইডি কার্ডের কপি, পেশার প্রমাণপত্র, কাবিন নামা, ইউটিলিটি বিল ইত্যাদির কোন ডকুমেন্ট লাগতে পারে।

• নাগরিক সনদ/ কাউন্সিলর/ চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট: যারা নতুন পাসপোর্ট করবেন তাদের ক্ষেত্রে অবশ্যই নাগরিক সনদের কপি জমা দিতে হবে।
• পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয় পত্র:
• পাসপোর্টের কপি: যারা Passport Renew করবেন, তারা তাদের সর্বশেষ পাসপোর্টের ফটোকপি আবেদনের সাথে জমা দিতে হবে। এছাড়া আবেদন জমা দেয়ার সময় মূল পাসপোর্ট দেখাতে হবে। পূর্ববর্তী পাসপোর্টের তথ্য গোপন রাখা যাবে না, গোপন করলে আবেদন ফি সহ আবেদন বাতিল করা হবে।
• NOC বা অনাপত্তিপত্র: সরকারি চাকরীজীবি যারা নিজ প্রয়োজনে পাসপোর্ট করবেন, তারা তার বিভাগ বা অধিদপ্তর থেকে No Objection Certificate বা অনাপত্তিপত্র নিতে হবে।
• GO (Government Order): যারা সরকারি কাজে দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট করবেন। তাদের প্রয়োজন হবে সরকারি অফিসিয়াল পাসপোর্ট করার সরকারি আদেশ।
• পেশাগত সনদ বা চাকুরীর আইডি কার্ডের কপি: পেশাজীবির ক্ষেত্রে- যেমন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, হিসাবরক্ষক, আইনজীবির ক্ষেত্রে পেশার প্রমাণপত্র হিসেবে সনদ বা আইডি কার্ডের কপি জমা দিতে হবে।
• কাবিন নামা: পাসপোর্টে Spouse Name যুক্ত করলে স্বামী বা স্ত্রীর এনআইডি কার্ড ও Marriage Certificate বা কাবিন নামার কপি আবেদনের সাথে জমা দিতে হবে।

পাসপোর্ট সংশোধন করতে কি কি লাগে

পাসপোর্ট সংশোধন করতে প্রয়োজন হয়:

1. জাতীয় পরিচয়পত্র;
2. জন্ম নিবন্ধন (যাদের বয়স ২০ বছরের কম);
3. শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র (প্রযোজ্য হলে);
4. বিদেশে দূতাবাসে আবেদন করা হলে Permanent Resident Card/Job ID Card/Student ID Card/Driving License;
5. লিখিত আবেদন;
6. অঙ্গীকারনামা;
7. পুরাতন পাসপোর্ট ও পাসপোর্টের ফটো কপি।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: পাসপোর্ট সংশোধনের ক্ষেত্রে প্রয়ােজনে স্পেশাল ব্রাঞ্চ ও অন্যান্য গােয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে প্রদত্ত তথ্য যাচাই করা হতে পারে।

তথ্যসূত্র: Passport Instructions by Department of Immigration & Passports.

FAQs

পাসপোর্ট সংক্রান্ত আরো তথ্যের লিংক

আবেদন	পাসপোর্ট আবেদন
সংশোধন	পাসপোর্ট সংশোধন করার নিয়ম
ফি পরিশোধ	ই পাসপোর্টের টাকা জমা দেওয়ার নিয়ম
পাসপোর্ট চেক	ই পাসপোর্ট চেক
পুরাতন পাসপোর্ট	পুরাতন পাসপোর্ট কি করবেন
ক্যাটাগরি	ই পাসপোর্ট
হোমপেইজে যান	Eservicesbd