আয়কর রিটার্ন জমা না দিলে জরিমানা কত – আয়কর আইন ২০২৩
নতুন আয়কর আইন ২০২৩ এর ২৬৬ ধারা অনুযায়ী, আয়কর রিটার্ন জমা না দিলে জরিমানা আরোপ করার বিধান রাখা হয়েছে। জানুন, কখন আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে এবং জমা না দিলে জরিমানা কত হবে।

ADVERTISEMENT
পূর্বের আয়কর আইন ১৯৮৪ যুগোপযোগী ও আধুনিক করার জন্য বিভিন্ন আইন ও নিয়ম পরিবর্তন করে নতুন আইন পাশ করা হয়।
পূর্বে TIN বা টিন সার্টিফিকেট থাকলেই করদাতাদের বাধ্যতামূলক রিটার্ন জমা দিতে হতো। নতুন আইন অনুযায়ী শুধুমাত্র যাদের করযোগ্য আয় করমুক্ত সীমা অতিক্রম করবে এবং যাদের ৪৩টি সেবা গ্রহণের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে তাদেরকেই আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে।
কিন্তু রিটার্ন জমা দেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকার পরও কেউ Tax Return দাখিল না করলে বা রিটার্ন দাখিলে ব্যর্থ হলে তার জন্য জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
ADVERTISEMENT
অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে যে, সরকার কিভাবে জানবে আমার আয় কত? বা আয়কর রিটার্ন জমা না দিলে কি হয়? Income Tax Return জমা না দিলে আপনার সকল আয় অবৈধ হয়ে যাবে, তাই প্রয়োজন হলে অবশ্যই রিটার্ন দিতে হবে।
আসুন জানি এবার জানি রিটার্ন না দিলে জরিমানা কত এবং কিভাবে জরিমানা আরোপ করা হবে, তা নিয়ে আইনের ধারায় কি বলা হয়েছে।
আয়কর রিটার্ন জমা না দিলে জরিমানা
বাধ্যবাধকতা থাকা শর্তেও আয়কর রিটার্ন জমা না দিলে, সর্বশেষ নিরূপিত আয়করের উপর ১০% হারে বা নূন্যতম ১০০০ টাকা জরিমানা দিতে হবে। এছাড়া ধারাবাহিকভাবে রিটার্ন দাখিল না করলে, প্রতি ১ দিনের জন্য ৫০ টাকা হারে অতিরিক্ত জরিমানা দিতে হবে।
ADVERTISEMENT
এছাড়া, আইনের ধারা ১৭৭, ১৪৫ ও ২০০ অনুযায়ী আয় ও কর সংক্রান্ত প্রমাণ উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হলেও জরিমানা আরোপ করা হবে।
আরও পড়তে পারেন:
- অনলাইনে সঞ্চয়পত্রের আয়কর রিটার্ন ফরম পূরণ
- টিন সার্টিফিকেট থাকলেই কি কর দিতে হবে
- জরিমানা ছাড়া আয়কর রিটার্ন দাখিলের সুযোগ
আসুন জেনে নেয়া যাক, আয়কর আইনের ধারায় কি বলা হয়েছে।
ADVERTISEMENT
আয়কর আইন ২০২৩ এর ২৬৬ (১) ধারায় বলা হয়েছে,
যেইক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তি যুক্তিসঙ্গত কারণ ব্যতীত, ধারা ১৬৬, ১৭২, ১৯১, ১৯৩ বা ২১২ এর অধীন কোনো ব্যক্তি রিটার্ন দাখিল করিতে ব্যর্থ হন, সেইক্ষেত্রে উপকর কমিশনার উক্ত ব্যক্তির সর্বশেষ নিরূপিত আয়ের উপর ধার্যকৃত করের ১০% (দশ শতাংশ) হারে জরিমানা আরোপ করিতে পারিবেন, যাহা ন্যূনতম ১ (এক) হাজার টাকা হইবে এবং ব্যর্থতা অব্যাহত থাকিলে ব্যর্থতা অব্যাহত থাকাকালীন প্রতিদিনের জন্য ৫০ (পঞ্চাশ) টাকা হারে অতিরিক্ত জরিমানা আরোপ করিতে পারিবেন।
তবে শর্ত থাকে যে, উক্ত জরিমানার পরিমাণ নিম্নবর্ণিত অঙ্ক অতিক্রম করিবে না, যথা:
ADVERTISEMENT
- (ক) কোনো ব্যক্তি করদাতা, যাহার ইতঃপূর্বে কখনো কর নির্ধারণ হয় নাই, তাহার ক্ষেত্রে ৫ (পাঁচ) হাজার টাকা;
- (খ) কোনো ব্যক্তি করদাতা, যাহার ইতঃপূর্বে কর নির্ধারণ হইয়াছে, তাহার ক্ষেত্রে সর্বশেষ নিরূপিত আয়ের উপর প্রদেয় করের ৫০% (পঞ্চাশ শতাংশ) বা ১ (এক) হাজার টাকা, দু’টির মধ্যে যাহা অধিক।
অর্থাৎ, আয়কর আইনের ধারা ১৬৬, ১৭২, ১৯১, ১৯৩ এবং ২১২ অনুযায়ী বিভিন্ন ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে। এসব ধারার অধীনে থাকার পরও রিটার্ন জমা না দিলে বর্ণিত হারে জরিমানা আরোপ করা হবে।
এছাড়া, আইনের ২৬৬ (২) ধারায় বলা হয়েছে,
যেইক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তি যুক্তিসঙ্গত কারণ ব্যতীত,
(ক) ধারা ১৭৭ এর অধীন কোনো রিটার্ন, তথ্য দাখিল বা উপস্থাপন করিতে ব্যর্থ হইয়াছেন সেইক্ষেত্রে উপকর কমিশনার উক্ত ব্যক্তির উপর তাহার সর্বশেষ নিরূপিত আয়ের উপর ধার্যকৃত করের ১০% (দশ শতাংশ) হারে অথবা ৫ (পাঁচ) হাজার টাকা, দু’টির মধ্যে যাহা অধিক, সেই পরিমাণ জরিমানা আরোপ করিতে পারিবেন এবং ব্যর্থতা অব্যাহত থাকিলে, ব্যর্থতা অব্যাহত থাকাকালীন প্রতি মাসের জন্য অথবা তাহার ভগ্নাংশের জন্য ১ (এক) হাজার টাকা হারে অতিরিক্ত জরিমানা আরোপ করিতে পারিবেন;
(খ) ধারা ১৪৫ এর অধীন কোনো সার্টিফিকেট প্রদান করিতে ব্যর্থ হইয়াছেন, সেইক্ষেত্রে উপকর কমিশনার উক্ত ব্যক্তির উপর ৫ (পাঁচ) হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা আরোপ করিতে পারিবেন এবং ব্যর্থতা অব্যাহত থাকিলে, ব্যর্থতা অব্যাহত থাকাকালীন প্রতি মাসের জন্য অথবা তাহার ভগ্নাংশের জন্য ১ (এক) হাজার টাকা হারে অতিরিক্ত জরিমানা আরোপ করিতে পারিবেন;
(গ) ধারা ২০০ এর আবশ্যকতা অনুযায়ী কোনো তথ্য দাখিল বা উপস্থাপনে ব্যর্থ হন, সেইক্ষেত্রে যে আয়কর কর্তৃপক্ষ ধারা ২০০ এর অধীন তথ্য চাহিয়াছে সেই কর্তৃপক্ষ উক্ত ব্যক্তির উপর ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা জরিমানা আরোপ করিতে পারিবেন এবং ব্যর্থতা অব্যাহত থাকিলে, ব্যর্থতা অব্যাহত থাকাকালীন প্রতি দিনের জন্য ৫০০ (পাঁচশত) টাকা হারে অতিরিক্ত জরিমানা আরোপ করিতে পারিবেন।
অর্থাৎ, ধারা ১৭৭ অনুযায়ী উৎসে করের প্রমাণ, ধারা ১৪৫ অনুযায়ী কর পরিশোধের সার্টিফিকেট এবং ধারা ২০০ অনুযায়ী কোন তথ্য ও প্রমাণ উপস্থানে ব্যর্থ হলে বর্ণিত হারে জরিমানা ধার্য্য করা হবে।
জরিমানার ক্ষেত্র ও পরিমাণ
আপনার বোঝার সুবিধার্থে, জরিমানার ক্ষেত্র ও জরিমানার পরিমাণ নিচে ছকে দেখানো হলো:
ক্ষেত্র | জরিমানা |
---|---|
রিটার্ন দাখিল না করলে | সর্বশেষ ধার্যকৃত করের ১০% হারে বা নূন্যতম ১০০০ টাকা |
রিটার্ন জমা না দেয়া অব্যাহত রাখলে | প্রতি ১ দিনের জন্য ৫০ টাকা হারে অতিরিক্ত জরিমানা |
উৎসে কর কর্তনের প্রমাণ দিতে না পারলে | সর্বশেষ ধার্যকৃত করের ১০% অথবা ৫০০০ টাকার মধ্যে যেটি বেশি |
কর পরিশোধের সার্টিফিকেট দেখাতে না পারলে | ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত এবং ব্যর্থতা অব্যাহত থাকলে প্রতি মাসের জন্য অথবা তাহার ভগ্নাংশের জন্য ১০০০ টাকা হারে অতিরিক্ত জরিমানা |
কোন তথ্য বা প্রমাণ উপস্থাপন করতে না পারলে | ৫০০০০ টাকা পর্যন্ত এবং ব্যর্থতা অব্যাহত থাকলে প্রতি দিনের জন্য ৫০০ টাকা হারে অতিরিক্ত জরিমানা |
আয়কর রিটার্ন জমা না দিলে এবং তথ্য ও প্রমাণ উপস্থাপনে ব্যর্থ হলে জরিমানার বিধান ও কত টাকা জরিমানা হবে তা বিস্তারিত শেয়ার করলাম। আশা করি তথ্যগুলো আপনার কাজে লাগবে।
আপনার যদি করযোগ্য আয় না থাকে এবং ভবিষ্যতে ও কখনো করযোগ্য আয় থাকবেনা বলে নিশ্চিত, আপনি চাইলে আপনার TIN Certificate বাতিল করতে পারেন।
এরপরও আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই কমেন্টে লিখে জানান, আমরা উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবো।
আয়কর, অনলাইন ব্যাংকিং ও সরকারি বিভিন্ন ই সেবা সম্পর্কে নতুন ও আপডেট তথ্য পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজ ফলো করতে পারেন – EServicesbd এবং নিয়মিত ভিজিট করুন eservicesbd.com।
আয়কর রিটার্ন দাখিল সংক্রান্ত আরও তথ্য
- সঞ্চয়পত্রের আয়কর রিটার্ন দাখিল
- টিন সার্টিফিকেট থাকলেই কি কর দিতে হবে
- জরিমানা ছাড়া আয়কর রিটার্ন দাখিলের সুযোগ
- সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের বিবরণী দাখিল করার নিয়ম
ADVERTISEMENT