ই নামজারি করার নিয়ম | অনলাইনে জমি খারিজ করার পদ্ধতি ২০২৪
ক্রয়সূত্রে বা উত্তরাধিকারসূত্রে মালিক হওয়া জমির নামজারি করতে চান? জেনে নিন অনলাইনে জমি খারিজ করার পদ্ধতি বা ই নামজারি চেক করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য।
ADVERTISEMENT
ক্রয়সূত্রে বা উত্তরাধিকারসূত্রে মালিক হওয়া জমির নামজারি করতে চান? জেনে নিন অনলাইনে জমি খারিজ করার পদ্ধতি বা ই নামজারি চেক করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য।
জমির নাম খারিজ করা জানলেও অনলাইনে জমি খারিজ আবেদন করার নিয়ম অনেকেরই অজানা। কোনো জমি ক্রয় করার পর পুরোনো মালিকের নাম পরিবর্তন করে তা নিজের নামে রেকর্ড করা একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
ADVERTISEMENT
নিজের নামে জমি রেকর্ড করার জন্য জমি খারিজ বা নামজারি করতে হয়। আগে জমি সম্পর্কিত এই ধরনের কার্যক্রম ভূমি অফিসে গিয়ে করা লাগত তবে এখন অনলাইনের মাধ্যমেই তা করা সম্ভব।
অনলাইনে https://land.gov.bd/ ভূমি মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল এই সাইটে প্রবেশ করে আপনি জমি খারিজ বা নাম খারিজ করার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
তাহলে আসুন জেনে নিই অনলাইনে জমি খারিজ করার পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত।
ADVERTISEMENT
জমি খারিজ বা নামজারি কি
বাংলাদেশ জমি খারিজ করা বলতে জমির নামজারী করা বোঝায়। কোনো জমি ক্রয়সূত্রে, উত্তরাধিকারসূত্রে এবং দানসূত্রে মালিক হওয়ার পর তার মালিকানা নিজের নামে রেকর্ড করাই হলো জমি খারিজ বা নাম খারিজ।
ভূমির মালিকানা নিজের নামে রেকর্ড করার মাধ্যমে জমি খারিজ করা হয় যা এখন অনলাইনের মাধ্যমেই সম্ভব। অনলাইনে জমি খারিজ বা জমির নামজারী করা এখন খুব সহজ উপায়।
ADVERTISEMENT
বর্তমানে পুরানো মালিকের নাম পরিবর্তন করে নতুন মালিকের নামে অনলাইনে খুব সহজে জমি খারিজ করা যায়।
জমি খারিজ করার প্রক্রিয়া আগে ভূমি অফিসে অধিক সময় ও পরিশ্রমের মাধ্যমে করা হতো তবে এখন অনলাইনেই এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব। আসুন প্রথমেই জেনে নিই জমি খারিজ করতে কি লাগে।
আরও পড়ুন:
ADVERTISEMENT
জমি খারিজ করতে কি কি কাগজ লাগে
জমি খারিজ করতে যেসব কাগজ লাগে, তা হলো:
- আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র;
- আবেদন ফরম;
- ক্রয়কৃত জমির দলিল;
- জমি ক্রয়ের সর্বশেষ খতিয়ান;
- আবেদনকারীর স্বাক্ষর ও জন্ম তারিখ;
- আবেদনকারীর ঠিকানা;
- জমির কর পরিশোধের দলিল বা প্রমানপত্র;
- ওয়ারিশ সনদপত্র;
এক্ষেত্রে আবেদনের সময় জমির দলিলের সাল, নম্বর, ঠিকানা, খতিয়ান ইত্যাদি প্রয়োজনীয় তথ্য স্পষ্ট থাকতে হবে।
অনলাইনে জমি খারিজ করার প্রক্রিয়া সরকার কতৃক প্রদত্ত কিছু বিশেষ নির্দেশনা মেনে শুরু করতে হবে। ই নামজারি আবেদন অর্থাৎ জমি খারিজ আবেদন করার সময় এসব কাগজপত্রগুলো Scan করে Upload করতে হবে। তাই শুরুতে এসব Documents Scan করে মোবাইলে বা কম্পিউটারে Save করে রাখুন।
ই নামজারি করার নিয়ম
ভূমি মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকেই আপনি ই নামজারি করার আবেদন বা অনলাইনে জমি খারিজ আবেদন করতে পারবেন। অনলাইনে আবেদন দাখিলের সময় আবেদন ফি ২০/- ও নোটিশ জারি ফি ৫০/- মোট ৭০/ টাকা অনলাইনে নগদ, রকেট, বিকাশ, উপায়, অথবা Visa বা Mastercard এর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে। তাই এটির ব্যবস্থা রাখুন।
আবেদন করার পূর্বে অবশ্যই নির্দেশিকাটি ভালভাবে পড়ে নিবেন- ই-নামজারি করার জন্য নির্দেশিকা। তাছাড়া আরও সহজে বুঝার জন্য ভিডিও টিউটোরিয়াল দেখে নিতে পারেন।
চলুন ই-নামজারি আবেদন ফরম পূরণের প্রক্রিয়াটি ধাপে ধাপে জেনে নেয়া যাক।
ধাপ ১ – ই নামজারি সিস্টেমে প্রবেশ করুন
আপনার মোবাইল বা ডেস্কটপের যেকোনো ব্রাউজারে গিয়ে https://mutation.land.gov.bd/ এই লেখাটি টাইপ করে ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। এটি বাংলাদেশের ভূমি মন্ত্রণালয়ের ই নামজারি আবেদনের ওয়েবসাইট।
ধাপ ৩ – নামজারি আবেদন করুন
ই নামজারি অপশনে যাওয়ার পর জমির খারিজ সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের অপশন দেখা যাবে। এখান থেকে নতুন নামে জমি রেকর্ড করার জন্য আপনাকে নামজারি আবেদন লেখা অপশনটি নির্বাচন করতে হবে।
ধাপ ৪ – প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করুন
পরবর্তী ধাপে যাওয়ার পর আপনাকে নামজারি আবেদনের জন্য আপনার কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করতে হবে।
উপরের ছবিতে দেয়া তথ্যগুলো সঠিকভাবে পূরণ করে পরবর্তী লেখা তে ক্লিক করতে হবে। এরপর আপনার জমির তফসিল ও গ্রহিতার বিভিন্ন তথ্য এবং দাতার সকল প্রয়োজনীয় তথ্য নির্ভুলভাবে প্রদান করতে হবে।
ই নামজারি আবেদন ফরমে যেসব তথ্য দিতে হবে
ই নামজারি আবেদন ফরমটি পূরণের সময় আপনাকে নিম্নোক্ত তথ্যসমূহ পূরণ করতে হবে:
- দলিলসূত্রে জমির মালিক হলে দলিল নম্বর, দলিলের তারিখ, ও সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের নাম।
- খতিয়ানে রেকর্ডীয় মালিকের বা মালিকগণের নাম, পিতা/স্বামীর নাম ও পূর্ণ ঠিকানা।
- আবেদনকারী বা আবেদনকারীগণের নাম ও পূর্ণ ঠিকানা, সক্রিয় বাংলাদেশী মোবাইল নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর বা জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র নম্বর ও ইমেইল এড্রেস।
- আবেদনকারী যদি যৌথমূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর (RJSC) এর নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান হয় তাহলে প্রতিষ্ঠানের নাম, প্রতিনিধির নাম, প্রতিনিধির জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, জন্ম তারিখ, মোবাইল নম্বর, পদবি, প্রতিষ্ঠানের RJSC রেজিট্রেশন নং, নিবন্ধন তারিখ, জেলা, উপজেলা, ঠিকানা।
- আবেদনকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা হলে প্রতিষ্ঠানের নাম, প্রতিনিধির নাম, প্রতিনিধির জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, জন্ম তারিখ, মোবাইল নম্বর, পদবি।
- আবেদনকারী RJSC নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের বাইরে অন্যান্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হলে প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা, প্রতিনিধির নাম, প্রতিনিধির জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, জন্ম তারিখ, মোবাইল নম্বর, পদবি।
- যাদের নাম হতে কর্তন করে নামজারি দেয়া হবে তাদের এবং যাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে নোটিশ দিতে হবে তাদের সকলের নাম ও পূর্ণ ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর।
- আবেদনকারী নিজে না হয়ে প্রতিনিধি মারফতে আবেদন করলে উক্ত প্রতিনিধির নাম ও পূর্ণ ঠিকানা, সক্রিয় বাংলাদেশী মোবাইল নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর (তদাভাবে পাসপোর্ট/জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র নম্বর )ও ইমেইল এড্রেস, বয়স ও আবেদনকারীর সাথে সম্পর্ক।এবং
- আবেদিত জমি দাতা বা দাতা মৃত হলে তার ওয়ারিশের এবং দাতা কোন প্রতিষ্ঠান হলে প্রতিনিধির নাম ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, জন্ম তারিখ ও মোবাইল নম্বর, পদবি, RJSC নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে রেজিষ্ট্রেশন নম্বর , তারিখ, জেলা, উপজেলা, ঠিকানা।
ধাপ ৫: দলিল ও কাগজপত্র আপলোড করুন
সবশেষে জমির খতিয়ানের কপি ও অন্যান্য সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র PDF Format এ আপলোড করতে হবে। মনে রাখবেন অন্য কোন ফরম্যাটে File Upload করা যাবে না।
প্রতিটি pdf ফাইলের সাইজ অবশ্যই সর্বোচ্চ 1.25 MB এর মধ্যে হতে হবে এবং সবগুলো সংযুক্তি ফাইল মিলিয়ে অবশ্যই 25 MB এর মধ্যে হতে হবে। ফাইলের সাইজ কমানোর জন্য অনলাইন File Compress Tool ব্যবহার করতে পারেন যেমন, PDF2Go অথবা Sejda ইত্যাদি।
প্রতিটি Scan করা ফাইল আপলোড করার পর তা কি ধরণের ডকুমেন্ট সেটি সিলেক্ট করে দিতে হবে। এছাড়া কারিগরি সমস্যার কারণে ডকুমেন্ট ছাড়া আবেদন সাবমিট করতে চাইলে নিম্নোক্ত যেকোনো একটি অপশন নির্বাচন করে যাবে –
“আমি আবেদন সাবমিট করার ৩ কর্মদিবসের মধ্যে সকল ডকুমেন্ট (প্রয়োজনীয় কাগজপত্র) এসিল্যান্ড অফিসে এসে জমা দিবো অথবা আমি শুনানির দিন সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিবো।”
ধাপ ৬: আবেদন ফি প্রদান করুন
আপনার জমির নামজারি করার জন্য সকল প্রয়োজনীয় তথ্য সরবারহ করা হয়ে গেলে এবার আপনাকে এর জন্য আবেদন ফি জমা দিতে হবে।
অনলাইনে জমি খারিজ করার আবেদন ফি বাবদ ৭০ টাকা, রেকর্ড ফি ১০০০ টাকা এবং খতিয়ান ফি ১০০ টাকা অর্থাৎ ১১৭০ টাকা জমা দিতে হবে।
আপনি যেকোনো মোবাইল ব্যাংকিং যেমন- বিকাশ, নগদ, রকেট, উপায়, ব্যাংক কার্ড ইত্যাদির মাধ্যমে প্রদান করতে পারবেন।
উপরোক্ত ধাপগুলি অনুসরণ করে অনলাইনে জমি খারিজ করার জন্য আবেদন করলে তা অনুমোদন প্রাপ্ত হলে কয়েকদিনের মধ্যেই আপনার মোবাইলে এসএমএস এর মাধ্যমে আপনাকে তা জানিয়ে দেয়া হবে।
ই নামজারি চেক করার নিয়ম
অনলাইনে জমি খারিজ করার আবেদন করার পর তার স্ট্যাটাসও আপনি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে চেক করতে পারবেন।
এজন্য আপনি সরাসরি এই লিংকে https://mutation.land.gov.bd/search-application প্রবেশ করে আপনার আবেদনের স্ট্যাটাস বা সর্বশেষ অবস্থা জানতে পারবেন।
এখানে দেয়া খালিঘরে সঠিক ভাবে আপনার বিভাগ, আবেদন আইডি, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর এবং শেষে একটি ক্যাপচা পূরণ করে খুজুন লেখা তে ক্লিক করতে হবে।
আপনার সকল তথ্য সঠিক ও নির্ভুল হলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আপনার নামজারি আবেদনের স্ট্যাটাস সহ সকল তথ্য আপনার সামনে চলে আসবে এবং আপনি আপনার আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা জানতে পারবেন।
ই নামজারি আবেদনের ভিডিও টিউটোরিয়াল
FAQ’s
নামজারি বা জমি খারিজ করার ওয়েবসাইট হচ্ছে mutation.land.gov.bd।
অনলাইনে আবেদন করার পর জমি খারিজ বা নামজারি করতে প্রায় ২৮ থেকে ৩০ দিন সময় লাগে।
নামজারি করতে খতিয়ান ফি, আবেদন ফি, রেকর্ড ফি সহ মোট ১১৭০ টাকা লাগে।
তথ্যসূত্র: mutation.land.gov.bd, (ভূমি মন্ত্রণালয়)
ADVERTISEMENT