লাটভিয়া কাজের ভিসা, বেতন কত, কি কি লাগবে ও আবেদন প্রক্রিয়া

লাটভিয়ায় কাজের ভিসায় যেতে চান? জেনে নিন লাটভিয়ায় কাজের বেতন কত, ভিসা আবেদন করতে কি কি লাগবে, কিভাবে চাকরি খুঁজবেন এবং আবেদন প্রক্রিয়াসহ বিস্তারিত তথ্য।

লাটভিয়া কাজের ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া
  • Save

ADVERTISEMENT

লাটভিয়া (Latvia), উত্তর ইউরোপের একটি সুন্দর দেশ। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত দেশ হওয়ায়, লাটভিয়ায় কাজের ক্ষেত্রে ও ভাল আয় করার জন্য সুবিধাজনক। তাছাড়া লাটভিয়ায় কাজের ভিসা পেলে আপনি ইউরোপের অনেক দেশে স্বাধীনভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন।

লাটভিয়ায় কাজ পাওয়া, লাটভিয়ায় কাজের ভিসা আবেদন করতে কী কী লাগবে এবং সেখানে যাওয়ার জন্য কত টাকা প্রয়োজন— এসব নিয়ে এই আর্টিকেলে ধাপে ধাপে আলোচনা করব। আশা করি আপনাদের কাজে লাগবে।

ADVERTISEMENT

আপডেট: সুখবর, আগামী ১ লা জানুয়ারি থেকে ইউরোপের শেনজেন ভুক্ত দেশ বেলজিয়াম, ফিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড, লাটভিয়া, লুক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড, স্লোভেনিয়া এবং সুইডেন ভিসা আবেদন করা যাবে ঢাকার সুইডেন এম্বাসি থেকে।

লাটভিয়া কাজের ভিসা

লাটভিয়া কাজের ভিসা হচ্ছে একটা সরকারি অনুমতি, যার মাধ্যমে আপনে সেখানে বৈধভাবে কাজ করতে পারবেন। এটি মুলত আপনার কর্মংস্থানের বা কোম্পানীর চুক্তির উপর ভিত্তি করে দেয়া হয়। লাটভিয়াতে কাজ করতে গেলে আপনাকে Latvia Work Permit এবং Visa নিয়েই যেতে হবে।

ADVERTISEMENT

লাটভিয়া ওয়ার্ক ভিসার কয়েকটি ধরণ আছে।

ভিসার ধরনবিবরণ
A Typeযদি আপনি কোনো লাটভিয়ান কোম্পানিতে চাকরি করতে চান
C Type এবং E Typeযদি আপনার কোম্পানি আপনাকে লাটভিয়ার শাখায় স্থানান্তর করে
D Typeযদি আপনি কোনো ব্যবসায়িক মিটিং এর জন্য ভিসা
Seasonal ওয়ার্ক ভিসাকৃষি, পর্যটন, বা হসপিটালিটি সেক্টরে কাজের জন্য ৩-৬ মাসের জন্য ভিসা
European Union Blue CardHighly Skilled যেমন, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বা আইটি এক্সপার্ট হলে Blue Card এর জন্য আবেদন করা যাবে।

বাংলাদেশ থেকে যে সকল শ্রমিক লাটভিয়ায় কাজের উদ্দেশ্যে যায় তারা A- টাইপ ভিসা অথবা সিজনাল ওয়ার্ক ভিসাতে যায়।

আরও পড়ুন:

ADVERTISEMENT

লাটভিয়া কাজের বেতন কত?

জুন ২০২৪ সাল অনুসারে লাটভিয়ায় কাজের সর্বনিম্ন বেতন মাসে ৭০০ ইউরো যা বাংলাদেশী টাকায় ৯০ হাজার টাকা।

অর্থাৎ, আপনি যদি লাটভিয়ায় যেকোন ও কাজ করেন, তাহলে মাসে কমপক্ষে ৯০ হাজার টাকা পাবেন। আপনি যত টাকা আয় করবেন, তার উপর থেকে কিছু টাকা সরকারকে ট্যাক্স হিসাবে দিতে হবে।

অনেক কোম্পানি বেতনের কিছু সুবিধা দেয়। যেমন- অফিসে যাওয়ার জন্য টাকা দিতে পারে, থাকার জায়গা দিতে পারে বা আরও অনেক রকমের সুবিধা দিতে পারে।

ADVERTISEMENT

আরও পড়ুন:

লাটভিয়ায় কাজের ভিসার আবেদনের যোগ্যতা

লাটভিয়ায় কাজের ভিসার জন্য আবেদন করার আগে আপনার কিছু যোগ্যতা পূরণ করতে হবে এবং একটি চাকরী খুঁতে নিতে হবে।

  • আপনার একটি বৈধ চাকরির অফার থাকতে হবে। এজন্য প্রথমে বিভিন্ন জবসাইট থেকে চাকরী খুঁজে অনলাইনে আবেদন করতে হবে।
  • চাকরীর জন্য প্রয়োজনীয় সকল শিক্ষাগত ও শারীরীক যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতা আপনার থাকতে হবে।
  • কিছু পেশার জন্য বিশেষ ট্রেইনিং প্রয়োজন। উদাহরণস্বরূপ, Blue Card ভিসার জন্য প্রার্থীর উচ্চশিক্ষা এবং বিশেষ ক্ষেত্রের কমপক্ষে ৫ বছরের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন।

লাটভিয়া কাজের ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

লাটাভিয়া ওয়ার্ক ভিসা আবেদনের জন্য আপনার যেসব কাগজপত্র লাগবে এগুলো হচ্ছে:

  • বৈধ পাসপোর্টের কপি (যার মেয়াদ কমপক্ষে ৬ মাস থাকতে হবে)
  • সাম্প্রতিক পাসপোর্ট সাইজের ছবি
  • আর্থিক স্বচ্ছলতার প্রমাণের জন্য ব্যাংক স্টেটমেন্ট
  • Europass CV and Cover Letter
  • National ID Card
  • Health Insurance
  • লাটভিয়ার কোম্পানির পাঠানো একটি চাকরীর আমন্ত্রণ পত্র
  • বাংলাদেশ পুলিশ থেকে সংগ্রহ করা পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট
  • পূর্বের ভ্রমণের প্রমাণ (যদি থাকে)।
  • ভিসা ফি জমা দেওয়ার রসিদ

যদি আপনি কোন এজেন্সির মাধ্যমে কাজের ভিসা কাগজপত্র তৈরি করেন, তাহলে আপনার হয়তো ঝামেলা কম হবে। তবে এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করার খরচ অনেক বেশি। এছাড়া এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করলে আপনার ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতারিত হওয়া ও অনিশ্চয়তার ঝুঁকি থাকে।

তাই সবচেয়ে ভাল হয়, নিচে চাকরি খুঁজে নিজেই ভিসার আবেদন করা সহ সকল ফর্মালিটি পালন করা।

লাটভিয়া ওয়ার্ক ভিসা আবেদনের প্রক্রিয়া

Latvia Work Visa পাওয়ার জন্য প্রথমে অনলাইনে চাকরি খুঁজে Apply করতে হবে। তারপর ইন্টারভিউ শেষে চাকরী কনফার্ম হলে, কোম্পানী আপনার জন্য Latvia Work Permit সংগ্রহ করে আপনাকে পাঠাবে। এরপর Work Permit সহ অন্যান্য সকল ডকুমেন্ট দিয়ে লাটভিয়া এম্বাসীতে ওয়ার্ক ভিসার আবেদন করতে হবে।

ওয়ার্ক ভিসা পাওয়ার পর আপনি লাটভিয়া যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে পারবেন।

আসুন এবার লাটভিয়াতে চাকরি কিভাবে খুঁজবেন এবং ওয়ার্ক ভিসার আবেদন করবেন, তার পুরো প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে আলোচনা করা হলো।

ধাপ ১: অনলাইনে চাকরি খুঁজে আবেদন করুন

আপনাকে প্রথমে লাটভিয়ার কোনো কোম্পানিতে চাকরির সুযোগ খুঁজতে হবে। এজন্য আপনি LinkedIn সহ লাটভিয়ার জব সাইটগুলোতে চাকরী খুঁজতে পারেন। লাটভিয়ার জব খুঁজতে পারেন এসব সাইটে:

নিয়োগদাতা কোম্পানি আপনার আবেদন গ্রহণ করে আপনাকে ভিডিও কলে বা অন্য কোন মাধ্যমে ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকতে পারে। ইন্টারভিউ সম্পন্ন হওয়ার পর, যদি কোম্পানি আপনাকে নিয়োগ দিতে চায়, আপনাকে চাকরীতে যোগদানের জন্য অফার লেটার ও কন্ট্রাক্ট সাইন করার জন্য পাঠাবে।

ধাপ ২: চাকরির কন্ট্রাক্ট (Employment Contract) সাইন করুন

নিয়োগদাতা কোম্পানী থেকে আপনাকে চাকরির একটি Offer Letter পাঠাবে। এখানে চাকরির বিভিন্ন শর্ত, মেয়াদকাল, কাজের বিবরণ ও বেতন ইত্যাদি উল্লেখ থাকবে।

একই সাথে, কোম্পানি এসব শর্ত মেনে উভয় পক্ষের একটি ‍চুক্তিপত্র তৈরি করে পাঠাবে। ‍চুক্তির বিভিন্ন শর্ত ও বিস্তারিত ভালভাবে জেনে বুঝে সাইন করে কোম্পানীকে পাঠাবেন।

ধাপ ৩: Latvia Work Permit সংগ্রহ করুন

নিয়োগদাতা কোম্পানী আপনার জন্য লাটভিয়া ওয়ার্ক পারমিটের জন্য লাটভিয়ার Office of Citizenship and Migration Affairs দপ্তরে আবেদন করবে।

ওয়ার্ক পারমিটের জন্য প্রয়োজনীয় সকল তথ্য ও ডকুমেন্ট আপনি আপনার কোম্পানীকে পাঠাবেন। Work Permit ইস্যু হলে আপনি তার কপি সংগ্রহ করবেন।

ধাপ ৪: ওয়ার্ক ভিসার জন্য আবেদন করুন

এই ধাপে ভিসার জন্য, ঢাকায় অবস্থিত সুইডেন এম্বাসিতে আবেদন করতে হবে। এজন্য বিশেষ আবেদন ফরমে সকল তথ্য পূরণ করে সাথে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ফি জমা দিতে হবে।

লাটভিয়া ওয়ার্ক ভিসার আবেদন করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:

এবার আপনি বাংলাদেশ থেকে হলে ঢাকায় অবস্থিত সুইডেন দূতাবাসে কাজের ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। আবেদনের সময় আপনাকে কিছু কাগজপত্র জমা দিতে হবে এবং ভিসা প্রসেসিং ফি পরিশোধ করতে হবে।

ওয়ার্ক ভিসার আবেদন প্রক্রিয়ার সময় দূতাবাস আপনাকে ইন্টারভিউতে ডাকতে পারে। এই ইন্টারভিউতে তারা ভিসা পাওয়ার জন্য আপনার যোগ্যতা যাচাই করবে।

যদি আপনার আবেদন অনুমোদিত হয়, আপনি এম্বাসি থেকে আপনার ভিসা ও পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পারবেন।

ধাপ ৫: রেসিডেন্স পারমিট নিন

লাটভিয়ায় গিয়ে আপনাকে রেসিডেন্স পারমিটের জন্য আবেদন করতে হবে। এই পারমিট আপনাকে লাটভিয়ায় বসবাস করার অনুমতি দেবে।

লাটভিয়ায় কাজের ভিসায় গেলে অস্থায়ী বাসস্থানের অনুমতি নিতে হবে। লাটভিয়ায় পৌঁছানোর পর অভিবাসন ও নাগরিকত্ব অধিদপ্তর (OCMA)- এ গিয়ে বাসস্থান নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধনের জন্য বৈধ পাসপোর্ট, কাজের ভিসা, ওয়ার্ক পারমিট, লাটভিয়ায় বাসা ভাড়া নেওয়ার রশিদ বা কাগজ এবং ৪২৭ ইউরো সরকারি ফি জমা দিতে হবে। বাসস্থান নিবন্ধন না করলে ৩৫০ ইউরো জরিমানা হতে পারে।

লাটভিয়ায় অস্থায়ী বাসস্থানের অনুমতি পত্র/ Residence permit এক বছরের জন্য বৈধ এবং মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে OCMA অফিসে আবেদন করে মেয়াদ বাড়ানো যেতে পারে।

লাটভিয়া যেতে কত টাকা লাগে?

লাটভিয়া কাজের ভিসায় যেতে ভিসা প্রসেসিং ফি, হেলথ ইনসুরেন্স, প্রাথমিক বসবাসের খরচ, অন্যান্য আনুষঙ্গিক ডকুমেন্টেশন খরচ ও বিমানভাড়া সহ প্রায় ৩ লক্ষ টাকার মত লাগে।

যদি আপনি সব কিছু নিজে করেন তাহলে এই খরচ লাগবে। কোন এজেন্সির মাধ্যমে করাতে হলে সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত খরচ হবে যা অনুমান করে বলা সম্ভব নয়।

আরও পড়তে পারেন: ইউরোপের কোন দেশে যেতে কত টাকা লাগে

Latvia Embassy in Bangladesh

বাংলাদেশে লাটভিয়া এম্বাসি নেই, তবে লাটভিয়া শেনজেনভুক্ত দেশ হওয়ায় ঢাকায় অবস্থিত শেনজেনভুক্ত দেশ সুইডেন এম্বাসি থেকে লাটভিয়ার ভিসা আবেদন করা যাবে।

Embassy of Sweden,
House 1, Road No 51, Dhaka 1212
Phone: +880-2883-3144, +880-2883-3147
Email: [email protected],
[email protected]
Website: http://www.swedenabroad.com/en-GB/Embassies/Dhaka/

ইউরোপীয় ভিসা নিয়ে আরও তথ্য

শেষ কথা

এই আর্টিকেলে লাটভিয়া কাজের ভিসা পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, খরচ এবং নিয়মাবলী সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। আশা করি, আপনারা আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে অনেক উপকৃত হয়েছেন।

FAQs

লাটভিয়া কাজের ভিসার প্রসেসিং সাধারণত ১৫-৩০ কার্যদিবস সময় লাগতে পারে। তবে এটি আবেদনের ধরণ এবং দূতাবাসের কাজের চাপের ওপর নির্ভর করে।

লাটভিয়ায় ২০২৫ সালের জন্য ঘন্টাপ্রতি ন্যূনতম মজুরি প্রায় 4.50 ইউরো থেকে 5.00 ইউরো। এই হিসেবে লাটভিয়ায় কাজের সর্বনিম্ন বেতন হতে পারে ৭০০ ইউরো যা বাংলাদেশী টাকায় ৯০ হাজার টাকা।

লাটভিয়া ১ ইউরো সমান প্রায় ১২৫.১০ বাংলাদেশি টাকা (BDT)

হ্যাঁ, লাটভিয়া ওয়ার্ক ভিসা আবেদনের পূর্বে চাকরির কন্ট্রাক্ট ও ওয়ার্ক পারমিটের কপি সংগ্রহ করতে হবে।

হ্যাঁ, লাটভিয়া একটি সেনজেনভুক্ত দেশ।

না, Work Permit হচ্ছে লাটভিয়াতে আপনার কোন কোম্পানির আন্ডারে কাজ করার অনুমতি যেটি সেই দেশের Office of Citizenship and Migration Affairs (OCMA) ইস্যু করে থাকে। অন্যদিকে Work Visa হচ্ছে লাটভিয়াতে প্রবেশের অনুমতি যেটি লাটভিয়ার এম্বাসী ইস্যু করে।

ADVERTISEMENT

Similar Posts

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।