বিয়ের পর মেয়েদের স্থায়ী ঠিকানা কোনটি হওয়া উচিত?

সাধারণত বিয়ের পর মেয়েদের স্থায়ী ঠিকানা অবশ্যই স্বামীর বাড়িতে। তবে বিভিন্ন কারণে বা পরিস্থিতিতে বিবাহিত মেয়েদের ঠিকানা বাবার বাড়ি, অথবা নিজ বাড়ি হতে পারে।

Advertisement
বিয়ের পর মেয়েদের স্থায়ী ঠিকানা কোনটি হওয়া উচিত
  • Save

চাকরীতে, পাসপোর্ট তৈরি বা বিভিন্ন ক্ষেত্রে মহিলাদের স্থায়ী ঠিকানা ব্যবহারের প্রয়োজন হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে বিবাহিত মেয়েরা দ্বিধাদ্বন্দে ভুগেন যে তাদের স্থায়ী ঠিকানা কোনটি লিখা উচিত।

বিয়ের পর মেয়েদের স্থায়ী ঠিকানা কোনটা হওয়া উচিত তা নিয়ে একটি পরিষ্কার ধারণা দেয়ার জন্য এই ব্লগটা লিখলাম। যারা এই বিষয়ে জানেন না, বা সন্দিহান, আশা করি তাদের কাজে লাগবে।

Advertisement

বিয়ের পর মেয়েদের স্থায়ী ঠিকানা কোনটি হওয়া উচিত

বিয়ের পর স্বামীর স্থায়ী ঠিকানাই মেয়েদের স্থায়ী ঠিকানা হওয়া উচিত। কারণ বিয়ের পর সারাজীবন তাদেরকে স্বামীর কাছেই কাটাতে হয়। তবে, কোন মহিলা তালাকপ্রাপ্ত হলে বা স্বামীর ঠিকানাকে সুবিধাজনক মনে না করলে, বাবার বাড়ির ঠিকানাকে স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে রাখতে পারেন।

আসলে একজন মেয়ের স্থায়ী ঠিকানা কি হবে, তা বিভিন্ন পরিস্থিতির উপর নির্ভর করবে।

যেমন, বিয়ের আগে একজন মেয়ে তার নিজের ঠিকানা হিসেবে বাবার বাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করে, বিয়ের পর স্বামীর ঠিকানা। আবার কোন মেয়ে তার নিজের বাড়ি থাকলে, নিজের ঠিকানাকেও স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করে।

Advertisement

বিয়ের পরই মেয়েদের স্থায়ী ঠিকানা কোনটি রাখা উচিত হবে তা নিয়ে তৈরি হয় একটি সমস্যা। প্রশ্ন হচ্ছে, বিয়ের পর একজন মেয়ের কোন ঠিকানা ব্যবহার করা উচিত বা সুবিধাজনক।

আরও পড়তে পারেন:

জরুরী ডকুমেন্টে মেয়েদের স্থায়ী ঠিকানা

জন্ম নিবন্ধন ও এনআইডি কার্ডে একজন মহিলার স্থায়ী ঠিকানা পিতার ঠিকানা অর্থাৎ নিজের ঠিকানা থাকে। কিন্তু বিয়ের পর কোন মহিলা যখন চাকরীর আবেদন, পাসপোর্ট বা ব্যাংক একাউন্ট করতে যায় তখন কোনটি তার স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করবে এ নিয়ে তৈরি হয় মতভেদ।

জন্ম নিবন্ধন, এনআইডি ও পাসপোর্টে মেয়েদের স্থায়ী ঠিকানা কোনটি দেয়া উচিত?

Advertisement

জন্ম নিবন্ধন, এনআইডি ও পাসপোর্টে মেয়েদের স্থায়ী ঠিকানা তার পিতার বাড়ি অর্থাৎ নিজের বাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করতে পারে কোন অসুবিধা ছাড়া। তাছাড়া, যদি পিতার সম্পত্তির অধিকার পেয়ে থাকে অথবা নিজের জমি বা বাড়ির মালিক হয়, সেক্ষেত্রে আরও ভাল হয়।

এই ৩টি ডকুমেন্ট একটি অন্যটির সাথে জরুরীভাবে সম্পর্কিত। যেমন জন্ম নিবন্ধনের তথ্য অনুসারেই জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরি হয়। আবার জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয় পত্র অনুসারেই পাসপোর্ট তৈরি হয়। তাই এই ৩ ডকুমেন্টে এমন একটি ঠিকানা রাখা উচিত যেটা পরিবর্তন করার প্রয়োজন হবে না।

তাই, মেয়েরা স্থায়ী ঠিকানা তাদের নিজের বাড়ি বা বাবার বাড়ির ঠিকানা রাখতেই পারেন। এতে কোন অসুবিধা হওয়ার কথা না।

অনেক মেয়েরা পুরাতন সব ডকুমেন্টেই পিতার বাড়ির ঠিকানা সংশোধন করে স্বামীর ঠিকানা ব্যবহার করতে চায়। কারণ বিভিন্ন ডকুমেন্টে একই ঠিকানা না হলে অনেক টেকনিক্যাল সমস্যাও দেখা দেয়।

Advertisement

আবার অনেকে, স্বামীর ঠিকানা ব্যবহারে অনিরাপত্তা বোধ করে, কারণ বিবাহ বিচ্ছেদ হলে তখন এই ঠিকানা আবার পরিবর্তন নিয়ে তাকে পড়তে হবে নানা জটিলতায়।

চাকরির আবেদনে মেয়েদের স্থায়ী ঠিকানা কোনটি হবে?

যে কোন বেসরকারি বা সরকারি চাকরির আবেদনে জাতীয় পরিচয় পত্রের স্থায়ী ঠিকানা অনুযায়ী স্থায়ী ঠিকানা দিতে হবে। তবে বিবাহিত মহিলারা স্বামীর ঠিকানাকে স্থায়ী ঠিকানা হিসাবে ব্যবহার করে চাকরির আবেদন করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে স্থায়ী ঠিকানার সপক্ষে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন, পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনের সনদপত্র প্রয়োজন হবে।

১৯২৫ সালের দ্য ইন্ডিয়ান সাকসেশন অ্যাক্টের ১৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী, বিবাহিত মহিলাদের স্বামীর ঠিকানাই ওই মহিলার স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে বিবেচিত হবে। বাংলাদেশে বিভিন্ন সরকারি চাকরীর আবেদনেও বিবাহিত মেয়েদের স্বামীর ঠিকানাকে স্থায়ী ঠিকানাকে ব্যবহার করার অনুমতি দেয়।

অর্থাৎ মেয়েরা চাকরীর আবেদনে স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে নিজের পিতার ঠিকানা অথবা স্বামীর ঠিকানা যেকোন একটি ব্যবহার করতে পারেন।

যদি কোন মহিলার জাতীয় পরিচয়পত্রে স্থায়ী ঠিকানা পিতার বাড়ির ঠিকানা থাকে এবং সেখানে তার জমির মালিকানা থাকে, কোন অসুবিধা ছাড়াই এই ঠিকানা ব্যবহার করতে পারবেন।

অন্যদিকে, স্বামীর ঠিকানা ব্যবহার করতে চাইলে, সেই এলাকার মেয়র/ ওয়ার্ড কমিশনার/পৌরসভার মেয়র/ কাউন্সিলর, অথবা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রদত্ত স্থায়ী বাসিন্দার সনদপত্র নিতে হবে।

পাশাপাশিনোটারি পাবলিক কর্তৃক স্বাক্ষরিত সনদপত্র বা জাতীয় পরিচয়পত্রের স্থায়ী ঠিকানা সংশোধন করে নিতে পারলে আরও ভাল হবে।

স্বামীর ঠিকানা বনাম পিতার ঠিকানা

কোন মহিলার স্বামীর ঠিকানাই তার স্থায়ী ঠিকানা হতে হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই। যদিও ১৯২৫ সালের দ্য ইন্ডিয়ান সাকসেশন অ্যাক্ট অনুযায়ী বিভিন্ন ক্ষেত্রে মহিলাদের স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে স্বামীর ঠিকানাকে ব্যবহার করতে বলা হয়, এ নিয়ে অনেকের মতবিরোধ বা আইনগত জটিলতা আছে।

২০১৯ সালের ১লা ডিসেম্বর বাংলাদেশে ব্যাংকের সহকারী পরিচালক (জেনারেল)’ পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়। ঐ বিজ্ঞপ্তির ১৪ নম্বর পয়েন্টে বলা হয়েছে,

“বিবাহিত মহিলা প্রার্থীদের ক্ষেত্রে স্বামীর স্থায়ী ঠিকানাকে প্রার্থীর স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ করতে হবে।”

বিজ্ঞপ্তির ঐ শর্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) ও নারীপক্ষ।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আইনুন্নাহার সিদ্দিকা। তিনি বলেন, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বিবাহিত নারী প্রার্থীর ক্ষেত্রে যুক্তিহীনভাবে স্বামীর ঠিকানাকে স্থায়ী ঠিকানা উল্লেখ করার বাধ্যবাধকতা সংবিধানের ২৮ ও ২৯ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন।

আবার অনেকে মনে করেন, এ ধরনের নির্দেশ বা আদেশের আইনি ভিত্তি নেই। বিসিএস বা অন্য কোনো নিয়োগবিধিতেও আবশ্যিকভাবে স্বামীর ঠিকানাই দিতে হবে, তা উল্লেখ নেই। স্বামীর সঙ্গে তালাক হলে, সম্পর্ক বিচ্ছেদ বা সম্পর্ক খারাপ হলে নারীরা এ ঠিকানা ব্যবহার করে বিপাকে পড়বেন।

শেষকথা

পরিশেষে বলা যায় বিবাহিত মেয়েদের স্থায়ী ঠিকানা কি হবে, স্বামীর ঠিকানা না নিজের ঠিকানা সেটি তার স্থায়ী ভিত্তি বা জাতীয় পরিচয়পত্র সহ অন্যান্য কাগজপত্রের ঠিকানা, সুবিধাজনক অবস্থান ও নিরাপত্তা বিবেচনা করেই ঠিক করতে হবে।

তথ্যসূত্র:

Advertisement

Similar Posts

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।