তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ২০২৩ (নতুন নিয়ম ও মুনাফা)
জানুন তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের নতুন নিয়ম, প্রতি লাখে মুনাফা কত টাকা এবং বিস্তারিত সকল তথ্য।
ADVERTISEMENT
আসসালামু আলাইকুম, আশা করি ভাল আছেন। আপনি হয়তো সঞ্চয়পত্র করতে চান বা এ নিয়ে জানতে আগ্রহী। এখানে তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের সকল তথ্য শেয়ার করা হলো, আশা করি আপনার সকল উত্তর পাবেন।
প্রথমেই জেনে নিই, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র আসলে কি।
ADVERTISEMENT
৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র
সকল শ্রেণি-পেশার নাগরিক এবং সমাজসেবা কার্যালয় কর্তৃক প্রত্যয়নকৃত সকল অটিস্টিকদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান/ অন্য যে কোন অটিস্টিক সহযোগি প্রতিষ্ঠান ৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে পারবেন।
২০০৪ সালে প্রথম এই ধরণের সঞ্চয়পত্র চালু করা হয়। সর্বোচ্চ তিন বছর মেয়াদি এই সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষে মুনাফার হার ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ। তবে বিনিয়োগের পরিমান বৃদ্ধি পেলে মুনাফার হার কিছুটা কমানো হয়েছে।
এই সঞ্চয়পত্রে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে মুনাফার হার কমিয়ে করা হয়েছে সাড়ে ১০ শতাংশ। আর ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এই হার সাড়ে ৯ শতাংশ।
ADVERTISEMENT
আরও পড়ুন – সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের নতুন নিয়ম
৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র কারা ক্রয় করতে পারবেন
যে কোন একজন সুস্থ মস্তিকের প্রাপ্ত বয়স্ক অথবা নাবালক ব্যক্তি একক বা যৌথভাবে ৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে পারবেন। তবে নাবালকের ক্ষেত্রে অবশ্যই ১ জন প্রাপ্ত বয়স ব্যক্তি নাবালকের পক্ষে সঞ্চয়পত্র ক্রয় করবেন।
যারা ৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে পারবেন,
ADVERTISEMENT
- একজন প্রাপ্তবয়স্ক
- একজন নাবালক
- ২জন প্রাপ্ত বয়স্ক তাদের যৌথ নামে – ১) যৌথভাবে প্রদেয় অথবা একজনের সম্মতিতে অন্যজনকে প্রদেয়। ২) যে কোন ১জন কে প্রদেয়।
- একজন প্রাপ্তবয়স্ক অন্যের পক্ষে – ১) কোন নাবালক/ নাবালদের পক্ষে, ২) কোন একজন নাবালকের সাথে যৌথভাবে, ৩) আদালত কর্তৃক ঘোষিত কোন উম্মাদ ব্যক্তির অভিভাবক/ম্যানেজার হয়ে।
একনজরে গুরুত্বপূর্ন তথ্য
৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ | ১-৩ বছর |
৩ বছর মেয়াদে মুনাফার হার | ১১.০৪% |
একক ব্যক্তির সর্বোচ্চ ক্রয়সীমা | ৩০ লক্ষ টাকা |
যৌথ হিসাবে সর্বোচ্চ ক্রয়সীমা | ৬০ লক্ষ টাকা |
তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের নতুন নিয়ম
বাংলাদেশ সরকারের সঞ্চয়পত্রের নতুন নিয়ম অনুযায়ী একজন ব্যক্তি সব ধরনের সঞ্চয়পত্র মিলিয়ে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারবেন।
তিন মাস মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের ক্ষেত্রে ১ জন ব্যক্তি একক নামে ৩০ লাখ টাকা এবং যৌথভাবে ৬০ লাখ টাকার বেশি অংকের সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে পারবেন না।
তাছাড়া, নতুন অর্থ আইন ২০২২ অনুসারে একজন ব্যাক্তি ৫ লক্ষ টাকার বেশি পরিমাণ সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে হলে, তাকে বিগত করবর্ষের আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার প্রমাণ দেখাতে হবে। তবে ৫ লক্ষ টাকার কম সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে টিন সার্টিফিকেট বা আয়কর রিটার্নের কোন কাগজপত্র দেখাতে হবে না।
ADVERTISEMENT
তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মুনাফা
তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মুনাফা বিনিয়েগের পরিমাণ ও মেয়াদের উপর নির্ভর করে থাকে। অর্থাৎ ১ বছর মেয়াদে বিনিয়োগের চেয়ে ৩ বছর মেয়াদে বিনিয়োগ করলে মুনাফার হার তুলনামূলক বেশি হবে।
অপরদিকে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের পরিমাণ বেশি হলে, মুনাফার হার তুলনামূলক কম হবে।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সর্বশেষ হাল-নাগাদ নিয়ম অনুযায়ী, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার নিচের ছকে দেয়া হলো।
মেয়াদ | ১৫,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত | ১৫,০০,০০১ টাকা হতে ৩০,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত | ৩০,০০,০০১ টাকার উর্দ্ধে |
---|---|---|---|
১ম বছরান্তে | ১০.০০% | ৯.০৬% | ৮.১৫% |
২য় বছরান্তে | ১০.৫০% | ৯.৫১% | ৮.৫৬% |
৩য় বছরান্তে | ১১.০৪% | ১০.০০% | ৯.০০% |
সঞ্চয়পত্রের মুনাফার উপর কর কর্তন
৫ বছর মেয়াদী সঞ্চয়পত্র, ৩ মাস পরপর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ও পরিবার সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত মোট বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ৫% হারে এবং তার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ১০% হারে উৎসে কর কর্তন করা হয়।
আপনাদের আয়কর রিটার্ন দাখিলের ক্ষেত্রে এই কর প্রদানকে অগ্রিম কর হিসাবে দেখিয়ে রিটার্ন দাখিল করতে হবে। সঞ্চয়পত্রের কর প্রদানের প্রমাণস্বরুপ, আপনার যেখান থেকে সঞ্চয়পত্র ক্রয় করেছেন সেখান থেকে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের কর প্রদানের প্রত্যায়ন সংগ্রহ করে নিবেন।
তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে লাখে কত টাকা মুনাফা পাবেন
যদি আপনি ৩ বছর মেয়াদী ৩ মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে ১ থেকে ৫ লক্ষ টাকার সঞ্চয়পত্র ক্রয় করেন, প্রতি লাখে (১,০০,০০০ এর ১১.০৪%) ১১,০৪০ টাকা বাৎসরিক পাবেন। সুতরাং, প্রতি ৩ মাসে মুনাফা পাবেন- ১১,০৪০/৪ = ২৭৬০ টাকা। এখন, ২৭৬০ টাকার উপর ৫% হারে কর (২৭৬০ এর ৫%) ১৩৮ টাকা কর্তন করে ২৭৬০-১৩৮ = ২৬২২ টাকা ৩ মাস পর পর আপনার একাউন্টে পাবেন। এ হার ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
মোট ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ৩ বছর মেয়াদী ৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে ১১.৫২% মুনাফা প্রদান করা হয়। ৫ লক্ষের বেশি বিনিয়োগ করলে মুনাফার উপর ১০% হারে কর কর্তন করা হবে।
মোট ৫ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ ৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের প্রতি লাখে মাসে ৮৭৪ টাকা এবং ৫ লক্ষ টাকায় ৪৩৭০ টাকা নিট মুনাফা পাবেন।
আবার, ৫ লক্ষ টাকার বেশি এবং ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করলে, মুনাফার উপর ১০% কর্তন করা হবে। এক্ষেত্রে প্রতি লাখে মাসিক (৮৭৪ এর ১০%) ৮৭.৪০ টাকা কর্তন করে ৮৭৪-৮৭.৪০= ৭৮৬.৬০ টাকা পাবেন।
তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের আবেদন ফরম
সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের আবেদন ফরম আপনি যেখান থেকে সঞ্চয়পত্র ক্রয় করবেন তারাই সরবরাহ করবেন। আপনি, জাতীয় সঞ্চয় বিশেষ ব্যুরোর জেলা অফিস, বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক, ও ডাকঘর থেকে সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে পারবেন।
যদি আপনি নিজেই ফরম ডাউনলোড করতে চান, আমাদের সাইট থেকে ডাউনলোড করতে পারবেন। এই লিংক থেকে ডাউনলোড করুন- ৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ফরম pdf
সঞ্চয়পত্র ক্রয় এখন কোন ব্যাপারই না- ফরম পূরণ করে ছবি, এনআইডি এবং টিআইএন সার্টিফিকেট নিয়ে ব্যাংকে চলে যান মুহুর্তেই সঞ্চয়পত্র কেনা হয়ে যাবে।
৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র কিনতে কি কি লাগে
- তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের আবেদন ফরম। সঞ্চয়পত্র ফরম ডাউনলোড
- MICR চেক (ডিজিটাল চেকবুক-চেকের পাতায় গ্রাহকের নাম প্রিন্ট থাকে) (০১ লক্ষ টাকার বেশি হলে)।
- ক্রেতার ০২ (দুই) কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি৷
- ক্রেতার জাতীয় পরিচয় পত্র, পাসপোর্ট অথবা জন্ম নিবন্ধন সনদের ফটোকপি
- নমিনীর ০২ (দুই) কপি পাসপাের্ট সাইজ ছবি এবং জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি।
- ক্রেতার ই-টিনআইএন সার্টিফিকেটের ফটোকপি (০২ লক্ষ টাকার উপরে সঞ্চয়পত্র ক্রয়)
- আয়কর রিটার্ণ দাখিলের রশিদ (৫ লক্ষ টাকার উপরের সঞ্চয়পত্র ক্রয়)
৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ভাঙ্গানোর নিয়ম
আপনার বিশেষ প্রয়োজনে যে কোন সময় সঞ্চয়পত্র ভাঙ্গাতে পারেন। সঞ্চয়পত্র ভাঙ্গানোর জন্য আপনি যেখান থেকে সঞ্চয়পত্র ক্রয় করেছেন, সেখানে এটি ভাঙ্গানোর জন্য অনুরোধ করুন।
মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে সঞ্চয়পত্র ভাঙ্গালে আপনি যত তম বছরে ভাঙ্গাচ্ছেন, তত তম বছরের নির্ধারিত হার অনুযায়ী মুনাফা পাবেন। এক্ষেত্রে আগে আপনাকে বেশি মুনাফা দেয়া হলে, তা বিনিয়োগকৃত টাকা থেকে সমন্বয়পূর্বক কর্তন করে আপনার ব্যাংক একাউন্টে জমা করা হবে।
উদাহরণস্বরুপ, আপনি ৫ লক্ষ টাকা ৩ বছর মেয়াদে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেছেন। এক্ষেত্রে সঞ্চয়পত্রের ৩ বছর মেয়াদের মুনাফা অনুযায়ী আপনাকে বাৎসরিক ১১.০৪% হারে মুনাফা প্রদান করা হচ্ছে।
এভাবে আপনি ১ বছর মুনাফা গ্রহণের পর, সঞ্চয়পত্র ভাঙ্গাতে চাইলেন। যেহেতু আপনি ১ বছর পর্যন্ত চালু রেখেছেন, আপনাকে ১ বছর মেয়াদের মুনাফা ১০.০০% হারে মুনাফা দেয়া হবে।
বিগত ১ বছরে আপনাকে অতিরিক্ত যে (১১.০৪% – ১০%) = ১.০৪% হারে অতিরিক্ত যে পরিমাণ মুনাফা প্রদান করা হয়েছে তা আপনার বিনিয়োগকৃত ৫ লক্ষ টাকা থেকে কর্তন করা হবে।
সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষে স্বয়ংক্রীয়ভাবে আপনার বিনিয়োগকৃত টাকা আপনার ব্যাংক একাউন্টে ক্রেডিট (জমা) করা হবে। এজন্য আপনাকে কিছুই করতে হবে না।
FAQs
৫ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে সর্বনিম্ন ১০ টাকার সঞ্চয়পত্র কেনা যায়। পাঁচ বছর মেয়াদী এ বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র প্রবর্তন হয়েছিল ১৯৭৭ সালে।
৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র সর্বনিম্ন ১,০০,০০০ টাকা; ২,০০,০০০ টাকা; ৫,০০,০০০ ও ১০,০০,০০০ টাকার ক্রয় করা যাবে।
পরিবার সঞ্চয়পত্র কিনতে লাগবে, আবেদন ফরম, ব্যাংক একাউন্ট, আবেদনকারীর পাসপোর্ট সাইজের ছবি ২ কপি, নমিনির ২ কপি ছবি, আবেদনকারী ও নমিনীর জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, টিআইএন সার্টিফিকেট বা আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ (প্রযোজ্য হলে)
সঞ্চয়পত্র সংক্রান্ত আরও তথ্য
ক্যাটাগরি | সঞ্চয়পত্র |
পারিবারিক সঞ্চয়পত্র | পরিবার সঞ্চয়পত্রের নতুন নিয়ম ২০২৩ |
সোনালী ব্যাংক সঞ্চয়পত্র | সোনালী ব্যাংক সঞ্চয়পত্রের নতুন নিয়ম ২০২৩ |
সঞ্চয়পত্র ক্রয় | সঞ্চয়পত্র কোন কোন ব্যাংকে করা যায় |
সঞ্চয়পত্র ভাঙ্গানো | সঞ্চয়পত্র ভাঙ্গানোর নিয়ম |
হোমপেইজ | Eservicesbd |
ADVERTISEMENT