জমি রেজিস্ট্রি খরচ ২০২৪: কত টাকা লাগে ও কিভাবে হিসাব করবেন
জমি ক্রয় করতে যাচ্ছেন? জেনে নিন জমির রেজিস্ট্রি খরচ কত ও ক্যালকুলেটরের সাহায্যে কয়েক মিনিটেই বের করুন দলিল রেজিস্ট্রেশনের খরচের পরিমাণ।
ADVERTISEMENT
জমি ক্রয় করার পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো দলিল রেজিস্ট্রেশন। কিন্তু জমি রেজিস্ট্রেশন করতে কত টাকা খরচ হবে, সেটা না জানার কারণে অনেকেই দুশ্চিন্তায় পড়ে যান।
চলুন, ২০২৪ সালে জমি রেজিস্ট্রি খরচের সব খাত সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই, যাতে আপনি নিজেই আপনার জমি রেজিস্ট্রি খরচের হিসাব বের করতে পারেন।
ADVERTISEMENT
জমি রেজিস্ট্রি খরচ কত
ভূমি রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে সকল দলিলের জন্য সব ফিস প্রযোজ্য হয় না।, তাই সব দলিলেরে ফিসের হার সমান হয় না। দলিলের ধরণ, জমির ধরণ ও এলাকা অনুসারে তার ফিসের হার নির্ধারিত হয়ে থাকে। তাই, জমি রেজিস্ট্রেশনের খরচগুলো ক্ষেত্রভেদে কমবেশি হতে পারে।
জমি রেজিস্ট্রেশন ফি নির্ধারণে কিছু নির্দিষ্ট খাত রয়েছে। প্রতিটি খাতের জন্য আলাদা ফি পরিশোধ করতে হয়।
ADVERTISEMENT
জমি রেজিস্ট্রি খরচের মূল খাতগুলো হলো:
- স্ট্যাম্প শুল্ক
- রেজিস্ট্রেশন ফিস
- স্থানীয় সরকার কর
- উৎসে কর (53H ও FF53)
- মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট)
- ই-ফি
- এন ফি
- এন.এন.ফি (নকল নবীশ পারিশ্রমিক)
- হলফনামা ফি
- কোর্ট ফি
শর্টকাট পদ্ধতিতে জমি রেজিস্ট্রেশন খরচ হিসাব করতে জমি রেজিস্ট্রি খরচ ক্যালকুলেটর ব্যবহার করুন।
1. স্ট্যাম্প শুল্ক
- স্ট্যাম্প শুল্ক দলিলের মোট মূল্যের ১.৫% তবে সর্বোচ্চ ২ কোটি টাকা।
- হলফনামা দলিলের ক্ষেত্রে স্ট্যাম্প শুল্ক ৩০০ টাকা।
- সর্বোচ্চ ১,২০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ব্যবহার করা যায়।
- বাকি অর্থ পে-অর্ডারের মাধ্যমে স্থানীয় সোনালী ব্যাংকে জমা দিতে হয়।
6. রেজিস্ট্রেশন ফিস
এ-ফি: প্রতিটি দলিলের জন্য জমির লিখিত মূল্যের ১% সর্বনিন্ম ১০০ টাকা।
ADVERTISEMENT
২৪,০০০ টাকার কম হলে রেজিস্ট্রেশন অফিসে নগদ পরিশোধ করা যায়। ২৪,০০০ টাকার বেশি হলে স্থানীয় সোনালী ব্যাংক পিএলসি থেকে পে-অর্ডারের মাধ্যমে ফি জমা দিতে হবে।
এন ফি: ৩০০ শব্দ বিশিষ্ট প্রতি পৃষ্ঠা ২৪ টাকা।
ই ফি: প্রতি দলিলে ১০০ টাকা।
ADVERTISEMENT
3. স্থানীয় সরকার কর
- ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকায় ৩%
- সিটি কর্পোরেশন ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড (উপজেলাধীন নয়) হলে ২%
এই ফি স্থানীয় সোনালী ব্যাংক থেকে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের একাউন্ট নম্বরে Pay Order করতে হবে।
4. উৎসে কর (সাধারণ ক্রেতা)
জমি অবস্থানের এলাকাভেদে দলিলের মোট মূল্যের ভিত্তিতে উৎসে কর দিতে হয়। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, গনপুর্ত অধিদপ্তর
জমির অবস্থান | ফি’র পরিমাণ |
---|---|
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, গনপুর্ত অধিদপ্তর, ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এর নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকা | সারণি ১ অনুযায়ী |
ঢাকা দক্ষিন এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ব্যতীত, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নরসিংদী এবং যে কোন সিটি কর্পোরেশন ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকা | দলিলে লিখিত মোট মূল্যের ৬% কর |
জেলা সদরে অবস্থিত পৌরসভার আওতায় জমি হলে | দলিলে লিখিত মোট মূল্যের ৬% কর |
অন্যান্য এলাকার জমির ক্ষেত্রে | দলিলে লিখিত মোট মূল্যের ২% কর |
5. উৎসে আয়কর (রিয়েল এস্টেট কোম্পানি হলে)
জমির অবস্থান | ফি’র পরিমাণ |
---|---|
ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নরসিংদী জেলা | দলিলে লিখিত মূল্যের ৫% কর |
অন্যান্য জেলা | দলিলে লিখিত মূল্যের ৩% কর |
5. মূল্য সংযোজন কর (VAT)
শুধুমাত্র রিয়েল এস্টেট, ডেভেলপার বা কো-ডেভেলপার, ও ফ্ল্যাট বিক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য:
- প্লট বিক্রয়ের ক্ষেত্রে দলিল মুল্যের ২%;
- স্থাপনা/ফ্ল্যাট ও বিল্ডিং এর ক্ষেত্রে ১৬০০ বর্গফুট পর্যন্ত: ২% এবং ১৬০১ বর্গফুটের বেশি: ৪.৫%।
8. এন.এন.ফি (নকল নবীশ পারিশ্রমিক)
৩০০ শব্দ বিশিষ্ট প্রতি পৃষ্ঠার জন্য ৩৬ টাকা।
10. কোর্ট ফি
এল.টি নোটিশের জন্য আবেদনপত্রে ১০ টাকা কোর্ট ফি সংযুক্ত করতে হয়।
এছাড়া, বিভিন্ন ধরণের দলিল যেমন, সাফ কবলা, হেবা দলিল, দানপত্র দলিলের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন ফি ও অন্যান্য খরচের পরিমাণ জানতে দেখতে পারেন দলিল রেজিস্ট্রেশন ফিস।
জমি রেজিস্ট্রি খরচ হিসাব করার উপায়
জমি রেজিস্ট্রি খরচ হিসাব করার জন্য ২টি পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন।
- পদ্ধতি ১: নিজে নিজে হিসাব করে
- পদ্ধতি ২: অনলাইনে জমি রেজিস্ট্রি খরচ ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে
নিজেই হিসাব করার জন্য উপরোক্ত খাত অনুযায়ী জমির মোট মূল্য অনুসারে খরচের পরিমাণ বের করতে পারবেন।
তবে জমি রেজিস্ট্রি খরচ ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে কয়েক মিনিটেই জমির রেজিস্ট্রি খরচ বের করতে পারেন।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: সিটি কর্পোরেশন এলাকা, পৌরসভা এবং ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকায় ১০ লক্ষ টাকার অধিক জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন আপডেট থাকতে হবে।
জমি রেজিস্ট্রি খরচ ক্যালকুলেটর ব্যবহার করার নিয়ম
- ধাপ ১: প্রথমে ভিজিট করুন https://fees.matirpathshala.com;
- ধাপ ২: দলিলের ধরণ, বিভাগ, জেলা, ভূমি অফিস ও জমির অবস্থান সিলেক্ট করুন।
- ধাপ ৩: জমির মূল্য ও দলিলের পৃষ্ঠা সংখ্যা ইংরেজিতে লিখে, ফলাফল বাটনে ট্যাপ করুন। জমি রেজিস্ট্রি খরচের হিসাব দেখতে পাবেন।
মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে দলিল রেজিস্ট্রেশন ফিস বের করার উপায়
- ধাপ ১: প্রথমে Google Play Store থেকে Dolil Sheba অ্যাপটি ইনস্টল করুন;
- ধাপ ২: রেজিস্ট্রেশন ফিস অপশন থেকে দলিলের ধরণ, বিভাগ, জেলা, ভূমি অফিস ও জমির অবস্থান সিলেক্ট করুন।
- ধাপ ৩: জমির মূল্য ও দলিলের পৃষ্ঠা সংখ্যা ইংরেজিতে লিখে, ফলাফল বাটনে ট্যাপ করুন। জমি রেজিস্ট্রি খরচের হিসাব দেখতে পাবেন।
শেষ কথা
জমি রেজিস্ট্রি খরচ সম্পর্কে ধারণা না থাকার কারণে অনেকে দালালদের খপ্পরে পড়ে বাড়তি খরচ করেন। এক্ষেত্রে আপনার অবশ্যই যা করা উচিত:
- দলিল রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত সকল খরচ সম্পর্কে জেনে নেয়া;
- একজন বিশ্বস্ত আইনজীবী বা প্রফেশনালের সাহায্য নেয়া;
উপরের শেয়ার করা তথ্য দেখে আপনি নিজে নিজেই জমি রেজিস্ট্রেশনের আপডেট ফি অনুসারে খরচের পরিমাণ বের করতে পারবেন। আশা করি আপনার কাজে লাগবে।
জমি সংক্রান্ত অন্যান্য তথ্য
- নাম দিয়ে জমির মালিকানা যাচাই
- অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম
- জমির খতিয়ান অনুসন্ধান
- ই নামজারি যাচাই
তথ্যসূত্র: দলিল রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত ফিস, স্ট্যাম্প শুল্ক ও করের হার।
ADVERTISEMENT