ট্রাফিক, ট্রাফিক সাইন ও সিগনাল কাকে বলে, কত প্রকার ও কি কি

ট্রাফিক সাইন হচ্ছে রাস্তায় বিভিন্ন তথ্য, বাধ্যতামূলক ও সতর্কতামূলক চিহ্ন অপরদিকে ট্রাফিক সিগনাল হচ্ছে যানবাহন ও পথচারীদের চলাচল সমন্বয়ের জন্য সাংকেতিক নির্দেশনা।

ট্রাফিক সাইন কত প্রকার
  • Save

ADVERTISEMENT

ট্রাফিক সাইন এবং ট্রাফিক সিগন্যাল শব্দ দুইটি আমাদের খুবই পরিচিত। রাস্তায় পথচারী ও যানবাহনের নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করার জন্য ট্রাফিক সাইন ও সিগন্যাল খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করার জন্য এবং পথচারীদের নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করার জন্য নানা ধরনের ট্রাফিক সাইন ব্যবহার করা হয়ে থাকে আর এসব সাইন সম্পর্কে জানা এবং এগুলো মেনে চলা আমাদের দায়িত্ব।

ADVERTISEMENT

তাই আজকে, ট্রাফিক কাকে বলে, ট্রাফিক সাইন কত প্রকার ও কি কি এবং বিভিন্ন ট্রাফিক সিগন্যাল সম্পর্কে আমি বিস্তারিত আলোচনা করব।

ট্রাফিক কাকে বলে

কোনো নির্দিষ্ট রাস্তা, রুট বা চলাচলেরর পথে যানবাহনের চলাচলকে ট্রাফিক বলা হয়। এসব রুট সড়ক, জলপথ, রেলপথ বা আকাশ পথও হতে পারে। ট্রাফিকের মধ্যে বিভিন্ন ধরণের যানবাহন থাকে, যেমন, বাস, ট্রাক, কার, মোটরবাইক, নৌকা, স্পিডবোড, জাহাজ, উড়োজাহাজ ইত্যাদি।

ADVERTISEMENT

যানবাহন চলাচলের রুটে দূর্ঘটনা রোধ এবং শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট খুব জরুরী। ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টের জন্য বিভিন্ন ট্রাফিক সাইনট্রাফিক সিগনাল ব্যবহার করা হয়।

ট্রাফিক সাইন কত প্রকার

ট্রাফিক সাইন হল রাস্তার পাশে বা উপরে রাস্তা ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন নির্দেশনা, সতর্কতা ও তথ্য প্রদানের জন্য স্থাপন করা বিশেষ চিহ্ন। ট্রাফিক সাইন প্রধানত ৩ প্রকার হয়ে থাকে এগুলো হলো

  • বাধ্যতামূলক সাইন;
  • সতর্কতামূলক সাইন;
  • তথ্যমূলক সাইন।
ট্রাফিক সাইনআকৃতিরং
বাধ্যতামূলক সাইনবৃত্তাকারলাল ও নীল
সতর্কতামূলক সাইনত্রিভুজআকৃতিহলুদ
তথ্যমূলক সাইনআয়তাকারকাল ও বিভিন্ন রংয়ের

বাংলাদেশ বিআরটিএর বিভিন্ন ধরনের ট্রাফিক সাইন দেখতে পারেন বিআরটিএর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে – BRTA Traffic Signs

ADVERTISEMENT

চলুন এখন ট্রাফিক সাইন কত প্রকার ও কি কি এই সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে কিছু তথ্য জানা যায়।

আরও পড়তে পারেন:

১. বাধ্যতামূলক সাইন

বাধ্যতামূলক সাইন মূলত যানবাহন চালকদের জন্য বাধ্যতামূলক নির্দেশনা প্রদান করার জন্য ব্যবহার করা হয়। এই বাধ্যতামূলক সাইন গুলো সাধারণত বৃত্তাকার ও লাল বা নীল রঙের হয়ে থাকে।

ADVERTISEMENT

আবার বাধ্যতামূলক সাইনকে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা হয় একটি হলো বাধ্যতামূলক হ্যাঁ বাচক সাইন এবং অন্যটি হলো বাধ্যতামূলক না বাচক সাইন।

বাধ্যতামূলক হ্যাঁ বাচক সাইনগুলো সাধারণত গোলাকার ও নীল রঙের হয়ে থাকে এবং গোল বৃত্ত গুলোর মধ্যে সম্পূরক চিহ্ন লক্ষ্য করা যায় যেমন বামে মোড় নিন, সম্মুখে বামে মোড়, ছোট গোল চক্কর, কেবলমাত্র সাইকেল ইত্যাদি।

বাধ্যতামূলক হ্যা সাইন
  • Save

আবার বাধ্যতামূলক না বাচক সাইনগুলো সাধারণত গোলাকার এবং লাল রঙের হয়ে থাকে যেমন ডানে-বামে মোড় নিষেধ, পথচারী পারাপার নিষেধ, হর্ন বাজানো নিষেধ, পার্কিং ও ওভারটেকিং নিষেধ ইত্যাদি।

বাধ্যতামূলক ট্রাফিক সাইন
  • Save

বাধ্যতামূলক না বাচক সাইনগুলো দ্বারা আপনি রাস্তায় চলাচলের সময় যে সকল বিষয় করতে পারবেন না তা নির্দেশ করা হয় এবং রাস্তায় চলাচলের সময় অবশ্যই এই সাইনগুলো মানতে হবে।

২. সতর্কতামূলক সাইন

ট্রাফিক সাইন গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো সতর্কতামূলক সাইন যা রাস্তায় চলার সময় পথচারীদের বিভিন্ন ধরনের সতর্কতা নির্দেশ করে থাকে।

এই ধরনের সাইনগুলো সাধারণত রাস্তায় চলাচলের সময় যানবাহন চালকদের সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করে থাকে।

  • Save

এই সাইন গুলো ত্রিভুজাকৃতির এবং হলুদ রঙের হয়ে থাকে যেমন হাইওয়ে সাইন, জলপ্রপাত সাইন, স্কুল এলাকা সাইন, পার্শ্ব রাস্তা ডানে, অসমতল রাস্তা, রাস্তার কাজ চলছে, ফেরি পারাপার, বিপদজনক গর্ত, আঁকাবাঁকা রাস্তা ইত্যাদি।

রাস্তায় চলাচলের সময় পথচারীদের সতর্কতা অবলম্বন করার জন্য মূলত সাইন গুলো দেয়া হয়ে থাকে আর তাই আমাদের অবশ্যই রাস্তায় চলাচলের সময় এই সতর্কতামূলক সাইন গুলো অনুসরণ করতে হবে বা মেনে চলতে হবে।

৩. তথ্যমূলক সাইন

ট্রাফিক সাইন গুলোর মধ্যে সর্বশেষ হলো তথ্যমূলক সাইন যা সাধারণত পথচারীদের তথ্যমূলক নির্দেশনা দিয়ে থাকে।

এ ধরনের সাইন রাস্তায় যানবাহন চালকদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করে থাকে এবং এর ফলে রাস্তায় চলাচলের সময় পথচারীদের সুবিধা হয়।

  • Save

তথ্যমূলক সাইন গুলো সাধারণত আয়তক্ষেত্রাকার এবং বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে যেমন পথ নির্দেশক সাইন, শহরের সীমা সাইন, ট্রাফিক পুলিশ সাইন, রাস্তা বন্ধ, পথচারী পারাপার, পার্কিং, ফিলিংস স্টেশন, টেলিফোন, হাসপাতাল, বনভোজন, ফায়ার স্টেশন, টয়লেট ইত্যাদি।

এই তথ্যমূলক সাইনগু লো সাধারণত যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে এবং রাস্তায় চলাচলের সময় পথচারীদের তথ্য সরবরাহ করতে থাকে এবং এর ফলে এটি পথচারীদের সতর্ক করে দুর্ঘটনার হার হ্রাস করতে বিশেষ ভাবে সহায়তা করে।

এগুলো হলো প্রধান তিনটি ট্রাফিক সাইন যা রাস্তায় চলাচলের সময়  নানা ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে পথচারী এবং যানবাহন চালকদের অবশ্যই মেনে চলতে হবে।

ট্রাফিক সিগনাল কাকে বলে

ট্রাফিক সিগনাল (Traffic Signal) হলো এক ধরনের নির্দেশনা সংকেত যা রাস্তায় যানবাহন ও পথচারীদের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ট্রাফিক পুলিশ ব্যবহার করে। ট্রাফিক সিগন্যাল ৩ ভাবে দেয়া যেতে পারে, ১) বাহুর সংকেত, ২) আলোর সংকেত ও ৩) শব্দ সংকেত।

ট্রাফিক সিগনাল মূলত বিভিন্ন যানবাহন ও পথচারীদের চলাচল সমন্বয় করার জন্য ড্রাইভার ও পথচারীদের দেয়া নির্দেশনা। বেশিরভাগ শহরেই লাল, নীল ও হলুদ ট্রাফিক সিগনাল লাইট এর মাধ্যমে এই নির্দেশনা মেসেজ দেয়া হয়।

ট্রাফিক সিগনাল কত প্রকার

ট্রাফিক সিগনাল সাধারণত তিন প্রকার এগুলো হলো বাহুর সংকেত, আলোর সংকেত ও শব্দ সংকেত। চলুন ট্রাফিক সিগন্যাল কত প্রকার ও কি কি সে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা যাক।

১. বাহুর সংকেত

ট্রাফিক সিগন্যালের মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন সংকেত হলো বাহুর সংকেত বা হাতের সংকেত যা ট্রাফিক পুলিশ তার হাতের মাধ্যমে দিয়ে থাকে।

এই ধরনের হাতের সংকেত সাধারণত অনেক আগে ব্যবহার করা হতো তবে বর্তমানে বেশিরভাগ শহরেই ইলেকট্রনিক লাইট ব্যবহার করে ট্রাফিক সিগন্যাল দেয়া হয়।

২. আলোর সংকেত

আলোর সংকেত যা সবুজ, হলুদ ও লাল রংয়ের ইলেকট্রনিক লাইটের মাধ্যমে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়। সাধারণত রাস্তার মোড়ে পথচারী ক্রসিংয়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য ইলেকট্রিক লাইট স্থাপন করা হয়।

এই লাইট গুলো তিন ধরনের হয়ে থাকে, লাল, হলুদ এবং সবুজ।

  • লাল: যানবাহন থামার বা যানবাহন চলাচল বন্ধ করার নির্দেশ দিয়ে থাকে। লাল লাইট দেখানো হলে, তাৎক্ষণিকভাবে যানবাহন থেমে যেতে হবে এবং অপেক্ষা করতে হবে।
  • হলুদ: সাবধানে চলাচলের এবং কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার নির্দেশ দিয়ে থাকে। এছাড়া থামার প্রস্তুতির জন্যই হলুদ সংকেত দেয়া হয়।
  • সবুজ: পুনরায় যানবাহন চলাচলের নির্দেশ দিয়ে থাকে।

এভাবে আলোর সংকেত পর্যায়ক্রমে হলুদ, লাল এবং সবুজ আলো দেখাতে থাকে যা যানবাহন ও পথচারী চলাচল বন্ধ করার বা থামার, হলুদ আলো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার ও সাবধানে চলাচল করার এবং সবুজ আলো পুনরায় চলাচল করার নির্দেশ দেয়।

বিভিন্ন উন্নত দেশে Traffic Lights গুলো একটি Automatic Controller দিয়ে দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। পথচারী ও ট্রাফিকের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে সিগন্যাল গুলোকে পূর্বেই Program করা হয়ে থাকে।

৩. শব্দ সংকেত

শব্দ সংকেত গুলো সাধারণত জরুরী কোন নির্দেশনার জন্য ব্যবহার করা হয়। ট্রাফিক হুইসেল, এমারজেন্সি সাইরেন ইত্যাদি শব্দ সংকেতের উদাহরণ।

এগুলো হলো প্রধান তিন ধরনের ট্রাফিক সিগন্যাল তবে এগুলো ছাড়াও আরো নানা ধরনের ট্রাফিক সিগন্যাল রয়েছে যেমন –

  • MRTLS বা মেশিন পঠনযোগ্য ট্রাফিক সিগনাল যা যানবাহনের কম্পিউটার সিস্টেম দ্বারা পড়া যায়।
  • ভার্চুয়াল ট্রাফিক সিগনাল যা রাস্তার উপরে প্রজেক্টর এর মত প্রদর্শন করা হয়।
  • রেডিও ট্রাফিক সিগন্যাল যা রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করে যানবাহন চালকদের নির্দেশনা দিয়ে থাকে।

শেষ কথা

ট্রাফিক সাইন ও ট্রাফিক সিগন্যাল গুলো সাধারণত পথচারী এবং যানবাহন চালকদের রাস্তায় নিরাপদ ও নিশ্চিন্তের চলাচল করার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্যই ব্যবহার করা হয়ে থাকে এবং দুর্ঘটনা এড়ানার জন্য এগুলো বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।

তাই সকলের সচেতনতার জন্য ট্রাফিক সাইন এবং সিগনাল সম্পর্কে আমাদের জানা প্রয়োজন।

ADVERTISEMENT

Similar Posts

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।