ইভিএমে (EVM) ভোট পদ্ধতি ও ভোট দেওয়ার নিয়ম
ঘনিয়ে আসছে জাতীয় নির্বাচন ২০২৪, ভোট দিতে হবে ইভিএমে। আসুন জেনে নিই ইভিএম কি এবং ইভিএমে ভোট দেয়ার নিয়ম ও বিস্তারিত প্রক্রিয়া।
ADVERTISEMENT
ইভিএমে ভোট দেওয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে আমরা অনেকেই অবগত নই বা এর সঠিক নিয়ম অনেকেরই অজানা। তাই, আপনাদের সুবিধার্থে ইভেএমে ভোট গ্রহণ পদ্ধতি এবং আপনি কিভাবে ভোট দিবেন তার প্রক্রিয়া দেখানো হলো।
ইভিএম হলো একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস যার মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ করা হয় এবং ভোট গণনা করা হয়।
ADVERTISEMENT
ইভিএম এর পূর্ণরূপ কি
ইভিএম এর পূর্ণরূপ হলো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (Electronic Voting Machine)। এটি একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস যা নির্বাচনে ভোট দেওয়ার কাজে ব্যবহার করা হয়।
সঠিক ও নির্ভুল পদ্ধতিতে নির্বাচনে ভোটিং প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য এই ইলেকট্রনিক ডিভাইসটি ব্যবহার করা হয়।
ADVERTISEMENT
বর্তমানে অধিকাংশ দেশেই নির্বাচনে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যালট পেপার ব্যবহার না করে ইভিএম ব্যবহার করা হয়।
ইভিএম নিরাপদ ও দক্ষতার সাথে ভোটদান প্রক্রিয়া পরিচালনায় সাহায্য করে থাকে যার ফলে খুব দ্রুত ও নির্ভুলভাবে ভোট গ্রহণ করা সম্ভব হয়।
বাংলাদেশ সহ বিশ্বের প্রায় হাজারো দেশে বর্তমানে নির্বাচনের সময়ে এই ইভিএম ব্যাপক হারে ব্যবহার করা হয় এবং এ কারণে এটি বর্তমানে এত জনপ্রিয়।
ADVERTISEMENT
ইভিএম ভোট পদ্ধতি
ইভিএম ভোট পদ্ধতি হলো এমন একটি ভোটিং ব্যবস্থা যা ঐতিহ্যবাহী ব্যালট পেপার ব্যবহার না করে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (Electronic Voting Machine) এর মাধ্যমে করা হয়।
আসুন জেনে নিই, ইভিএম কিভাবে কাজ করে।
ইভিএম ভোটিং পদ্ধতিতে নিম্মোক্ত ধাপগুলো অনুসরণ করা হয়:
ADVERTISEMENT
- প্রথমেই এনআইডি নাম্বার অথবা Fingerprint এর মাধ্যমে ভোটার শনাক্তকরণ ও নিশ্চিত করা হয়।
- একটি সুরক্ষিত ভোটিং বুথে ইভিএম এ Control Unit এবং Ballot Unit থাকে।
- ভোটার প্রার্থীর মার্কা সিলেক্ট করে Confirm করার পর ভোট যাচাইয়ের জন্য একটি কাগজের স্লিপ ইভিএম থেকে দেয়া হয় যাতে নির্বাচিত প্রার্থীর নাম, তার দলীয় প্রতীক এবং একটি ভেরিফিকেশন কোড দেয়া হয়।
- এই স্লিপগুলো ইভিএম এর VVPAT স্টোরেজে সংরক্ষণ করা হয়।
- সকল ভোটারের ভোট দেওয়ার পর অর্থাৎ ভোটের সময় শেষ হওয়ার পর ইভিএম এ সংগ্রহ করা ভোট গুলো ইলেকট্রনিকভাবে গণনা করা হয়।
- ইভিএম ইলেকট্রনিক ভাবে ভোট গণনা করার পর ফলাফল প্রকাশ করা হয় এবং পরবর্তীতে তা ঘোষণা করা হয়।
ইভিএম ভোটিং পদ্ধতির মাধ্যমে ভোট গণনায় একটি নিরাপদ, নির্ভুল ও দক্ষ ফলাফল পাওয়া সম্ভব যা ব্যালট পেপারের তুলনায় অধিক কার্যকর।
ইভিএম ভোটিং পদ্ধতিতে এই ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে ভোটার সনাক্তকরণ থেকে শুরু করে ভোট গণনা ও ফলাফল বের করা পর্যন্ত সকল ধরনের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব।
কয়েকটি নির্দিষ্ট ধাপের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহার করে ভোটিং পদ্ধতি সম্পন্ন করা হয়।
এভাবে EVM Voting System পরিচালিত হয় এবং ব্যালট পেপারের তুলনায় বর্তমানে ইলেকট্রনিক ডিভাইস বা ইভিএম দ্বারা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা থেকে শুরু করে গণনা করা পর্যন্ত সুষ্টুভাবে সকল কাজ করা যায় বলে এটি বর্তমানে অধিক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
ইভিএমে ভোট দেওয়ার নিয়ম
ইভিএমে খুব স্বচ্ছতা ও নির্ভুলতার সাথে ভোট গ্রহণ করা যায়। চলুন ইভিএমে ভোট দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানা যাক।
ধাপ ১ – ভোটার সনাক্তকরণ
ইভিএমে ভোট দেওয়ার নিয়ম এর সর্বপ্রথম ধাপ হলো ভোটার সনাক্ত করা অর্থাৎ আপনি সত্যিকারের ভোটার কিনা তা যাচাই করা।
ভোটারের পরিচয় যাচাই করার জন্য বা ভোটার সনাক্তকরণের জন্য আপনার ভোটার সিরিয়াল নম্বর, ভোটার নম্বর বা এনআইডি নম্বর অথবা আঙ্গুলের ছাপ প্রয়োজন হবে।
পোলিং এজেন্ট এর কর্মকর্তারা আপনার এনআইডি কার্ড অর্থাৎ জাতীয় পরিচয় পত্র ভোটিং মেশিনে প্রবেশ করিয়ে যাচাই করবে এবং যাচাই করার পর সবকিছু ঠিক থাকলে আপনাকে ভোটিং কম্পার্টমেন্ট বা ভোটিং বুথে প্রবেশ করে ভোট দেয়ার অনুমতি দেয়া হবে।
ধাপ ২ – ভোটিং বুথে প্রবেশ করুন
নির্বাচনে ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে গোপনীয়তা বজায় রাখার জন্য আপনাকে ভোটিং কম্পার্টমেন্ট বা ভোটিং বুথে প্রবেশ করতে হবে।
ভোটিং বুথ সাধারণত কালো কাপড় দিয়ে ঘেরা সম্পূর্ণ আলাদা একটি কম্পার্টমেন্ট এবং এখানে ভোট দেওয়ার জন্য আপনাকে একা প্রবেশ করতে হবে।
আপনার যদি ইভিএম ব্যবহারে বা ভোট প্রদানে কোনো অসুবিধা হয় তাহলে নির্বাচনী কর্মকর্তারা এক্ষেত্রে আপনাকে সাহায্য করবে।
ধাপ ৩ – প্রার্থী নির্বাচন করুন
ভোটিং বুথে প্রবেশ করার পর প্রত্যেকটি প্রার্থীর পদের জন্য একটি করে ডিজিটাল ব্যালট ইউনিট সহ ইভিএম বা ভোটিং মেশিন দেখতে পাবেন।
ইভিএমে প্রত্যেক প্রার্থীর দলীয় প্রতীক সহ প্রার্থীদের তালিকা ব্যালট ডিভাইসে ডিজিটাল ভাবে প্রদর্শন করা হবে।
একজন ভোটার কেবল একটি মাত্র ভোট দিতে পারবে আর তাই ব্যালট ইউনিট থেকে আপনার পছন্দের যেকোনো একজন প্রার্থীর নাম বা প্রতীকের সাথে সংশ্লিষ্ট সাদা রঙের বাটনটি চাপ দিতে হবে।
মেশিনের উপরে ডান দিকে প্রার্থীদের নাম এবং বাম দিকে প্রার্থীদের সংশ্লিষ্ট প্রতীক দেয়া থাকবে এবং সেখান থেকে আপনাকে যেকোনো একজন প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার জন্য তার প্রতীক এর পাশে দেয়া সাদা বোতামটি চাপ দিতে হবে।
ধাপ ৪ – ভোট প্রদান নিশ্চিত করুন
আপনার পছন্দের প্রার্থীর প্রতীকের পাশে সাদা বোতামে চাপ দেওয়ার পর একটি বাতি জ্বলে উঠবে এবং এতে করে আপনি বুঝতে পারবেন আপনি কোন প্রতীকে ভোট দিচ্ছেন।
যদি ভুল প্রতীকের পাশে সাদা বোতামে চাপ দিয়ে থাকেন তাহলে ভুল সংশোধন করার জন্য নিচে থাকা লাল রংয়ের Cancel বোতামে চাপ দিতে হবে। এতে করে আপনার সিলেক্ট করা ভোট বাতিল হয়ে যাবে এবং আপনি আবার প্রার্থী বাছাই করতে পারবেন।
প্রাথী বাছাই হলে, নিচে Confirm বাটনে চাপ দিয়ে ভোট প্রদান নিশ্চিত করতে হবে এবং আপনার ভোট প্রদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
ধাপ ৫ – কালি চিহ্ন সংগ্রহ করুন
ভোটিং কম্পার্টমেন্ট ত্যাগ করার পর নির্বাচনে কর্মকর্তাদের থেকে আপনার আঙ্গুলে কালি চিহ্ন সংগ্রহ করতে হবে। এতে করে বোঝা যাবে আপনি একবার ভোট দিয়েছেন এবং পরবর্তীতে আর ভোট দিতে পারবেন না।
ইভিএম ভোট পদ্ধতি ভিডিও
ইভিএম এর সুবিধা
ইভিএমে ভোট দেওয়ার অনেক সুবিধা আছে এই সুবিধাগুলো হলো-
- ভোট গণনায় দ্রুত ও নির্ভুল ফলাফল পাওয়া যায়।
- অতিরিক্ত ভোট বা অবৈধ ভোট হ্রাস করা যায়।
- ইভিএমে প্রচুর পরিমাণে ব্যালট পেপার থাকায় প্রচুর মানুষ একসাথে ভোট দিতে পারে।
- ভোটের গোপনীয়তা বজায় রাখতে বিশেষভাবে সহায়তা করে।
- দ্রুত ভোটার শনাক্তকরণ বা ভোটার যাচাই করতে পারে।
- ইভিএমে সহজ পদ্ধতিতে দ্রুত ভোট দেওয়া যায়।
- ইভিএমে ভোট চুরি সম্ভব নয়।
ইভিএম এর অসুবিধা
ইভিএমে ভোট দেওয়ার বেশ কিছু অসুবিধা রয়েছে এগুলো হলো-
- ইভিএম এর প্রাথমিক খরচ ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ তুলনামূলক ভাবে অনেক বেশি।
- এটি ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস হওয়ায় হ্যাকিং এর ঝুঁকি থাকে।
- অনেক সময় ইভিএম এর নির্ভরযোগ্যতা ও নিরাপত্তা নিয়ে ভোটারদের সংশয় থাকে।
- যারা প্রতিবন্ধী বা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন তাদের ইভিএমে ভোট দিতে কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
- এটি বিদ্যুৎ সরবরাহের উপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল।
- নতুন প্রযুক্তি হওয়ায় ইভিএমে অনেকেরই ভোট দিতে সমস্যা হয়ে থাকে।
শেষ কথা
বর্তমানে নির্বাচনের ক্ষেত্রে ইভিএমে ভোট দেওয়ার পদ্ধতি খুবই দক্ষ ও নির্ভুল হয়ে থাকে যা ভোট গণনায় বিশেষভাবে সহায়তা করে থাকে।
তাই ভোটের সময় জালিয়াতি এবং নানা ধরনের অরাজকতা দূর করার জন্য ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণেই শ্রেয়।
ADVERTISEMENT